রবিবার বড়জোড়া চৌমাথায় যুব তৃণমূলের পথসভা। নিজস্ব চিত্র
যুব তৃণমূলের মিছিলের জেরে বাঁকুড়া-দুর্গাপুর রাজ্য সড়কে নিট পরীক্ষার্থীদের আটকে পড়ার অভিযোগ উঠল। রবিবার বাঁকুড়ার বড়জোড়ার ঘটনা। বিজেপির অভিযোগ, যানজটে আটকে কিছু পরীক্ষার্থী এ দিন সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি। তবে তৃণমূলের নেতৃত্বের দাবি, রাস্তার এক পাশ খোলা রেখেই মিছিল হয়েছে। কোনও পরীক্ষার্থীই সমস্যায় পড়েননি।
রবিবার ছিল ডাক্তারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার (নিট)। বাঁকুড়ার ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষাকেন্দ্র ছিল পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টার মধ্যে পরীক্ষাকেন্দ্রে হাজির হতে বলা হয়েছিল। এ দিকে, পুলিশকে নিয়ে বিজেপি নেতাদের করা বিভিন্ন মন্তব্যের প্রতিবাদে বাঁকুড়া দুর্গাপুর ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক ধরে মিছিল করে যুব তৃণমূল। সাড়ে ১০টা নাগাদ বড়জোড়া ব্লক অফিস সংলগ্ন এলাকা থেকে সেই মিছিল শুরু হয়ে যায় চৌমাথায়। বড়জোড়া-দুর্লভপুর ও বাঁকুড়া দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের সংযোগস্থলে একটি পথসভাও করা হয়। তৃণমূলের দাবি দু’হাজার লোক হয়েছিল মিছিলে। তবে বিজেপির দাবি, সংখ্যাটা ছিল মেরেকেটে তিনশো।
বিজেপির অভিযোগ, যুব তৃণমূলের মিছিল যখন শুরু হয়, পরীক্ষার্থীদের নিয়ে প্রচুর গাড়ি দুর্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। এমনিতেই চৌমাথা এলাকা যানজটপ্রবণ। মিছিলের জেরে গাড়ি একদম থমকে যায়। বিজেপির যুব মোর্চার বড়জোড়ার নেতা সোমনাথ কর বলেন, “গাড়ি থেকে নেমে অনেক পরীক্ষার্থী রাস্তা ফাঁকা করার আর্জি জানাতে থাকেন। তাঁদের সমস্যা দেখে আমরা উপস্থিত পুলিশ কর্মীদের কাছে গিয়ে অনুরোধ করি। কিন্তু যানজট থেকে পরীক্ষার্থীদের বেরোতে এক ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে গিয়েছে।’’
বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ চৌমাথা এলাকা থেকে নিট পরীক্ষার্থী সুপ্রভা সিংহ বলেন, “প্রায় পনেরো মিনিট আটকে আছি। চিন্তা হচ্ছে খুব।’’ আর এক পরীক্ষার্থী সুচরিতা চট্টোপাধ্যায় বলেন, “অনেক ক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পরে কোনও রকমে চৌমাথা ছাড়িয়ে বেরোলাম। খুবই চিন্তায় পড়েছি।” দুর্গাপুরের বিধাননগরের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে ছেলেকে নিয়ে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর থেকে গিয়েছিলেন সুখময় রায়। তিনি বলেন, “গাড়ি ভাড়া করে এসেছি। বড়জোড়া থেকে দুর্গাপুর পর্যন্ত রাস্তায় এত যানজট, ভাবা যায় না। খুব কষ্ট হয়েছে।”
বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি হরকালী প্রতিহার বলেন, “রাজ্যের ভবিষ্যৎ যাঁদের হাতে, সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীরাই পথে আটকে পড়লেন। এর নিন্দা জানাবার ভাষা নেই।” যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল সাঁতরার দাবি, “এক জন পরীক্ষার্থীও কর্মসূচির জন্য সমস্যায় পড়েননি। বিজেপি রাজনৈতিক স্বার্থে বিষয়টিকে ইস্যু বানানোর মিথ্যা চেষ্টা করছে।”
যুব তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভানেত্রী অর্চিতা বিদ বলেন, “পৌনে ১১টা নাগাদ মিছিল বেরোয়। তখন পরীক্ষার্থীরা প্রায় ছিলেনই না। একটি গাড়ি আটকে পড়েছিল। আমি নিজে ভিড় কাটিয়ে সেটিকে বের করে দিয়েছি।” অর্চিতাদেবীর পাল্টা অভিযোগ, বিজেপি রাজ্য সড়কের পাশে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে পরীক্ষার্থীদের গাড়ি আটকে রাখছিল। খবর পেয়ে তাঁরা গিয়ে ছাড়ান। সোমনাথবাবুর বক্তব্য, ‘‘নিজেদের দায় ঢাকতে এই সব মিথ্যা অভিযোগ তুলছে তৃণমূল।”
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “শিল্পাঞ্চলের গাড়িগুলিকে বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে যানজট এড়ানো গিয়েছিল। পরীক্ষার্থীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য পুলিশ সক্রিয় ছিল।”