নিজের বাড়ির সামনে ঊষা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাড়িতে খাটে শোয়ানো মেয়ের পচাগলা দেহ। নির্বিকার চিত্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন মা। মেয়ের মৃত্যুতে তাঁর আচরণে সামান্য বদল নেই। প্রতিবেশীরা মেয়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে জানাতেন, সে অসুস্থ। কিন্তু তাল কাটল বৃহস্পতিবার। ওই মহিলার এক আত্মীয় জানতে পারেন, মেয়েটি মারা গিয়েছে। এর পর বিষয়টি জানতে পারেন পাড়ার সকলেই। পুলিশ এসে মেয়ের পচাগলা দেহ উদ্ধার করে। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
বুধবার বিকেল থেকেই বাঁকুড়ার দোলতলার মাঠপাড়া এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে পচা গন্ধ। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও গন্ধের উৎস খুঁজে পাননি এলাকার বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার তাঁরা জানতে পারেন, পাড়ারই বাসিন্দা ঊষা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক মাত্র মেয়ে কৃষ্ণা (২৬) মারা গিয়েছেন রবিবার। কিন্তু মেয়ের দেহ সৎকার না করে মা রেখে দিয়েছিলেন বাড়িতেই। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঊষার স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। প্রতিবেশীদের বক্তব্য, নিজের বাড়িতে বাইরের লোকজনের আনাগোনা বিশেষ পছন্দ করতেন না ঊষা। দিনের বেলাতেও অনেক সময়েই বাড়ির দরজায় তালা ঝুলিয়ে রাখতেন তিনি। তবে বিভিন্ন প্রয়োজনে মেয়েকে নিয়ে বেরোতেন। আত্মীয়দের সঙ্গেই তাঁর তেমন সম্পর্ক ছিল না। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঊষা এবং তাঁর মেয়ে দুজনেই মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলেন। রবিবার থেকে কৃষ্ণাকে দেখতে না পেয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। দু’এক জন প্রতিবেশী ঊষাকে তাঁর মেয়ের কথা জিজ্ঞাসাও করেন। তবে মেয়ে অসুস্থ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতেন ঊষা।
ঊষার প্রতিবেশী রবি সূত্রধর বলেন, “গতকাল থেকে গোটা এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। আমরা ভেবেছিলাম কুকুর, বিড়াল মারা গিয়ে পচছে। কিন্তু এমনটা হতে পারে তা কখনও ভাবিনি। ঘটনার কথা জানতে পেরে অবাক হয়ে যাই। কৃষ্ণা কবে মারা গিয়েছে জানি না। মা এবং মেয়ে দুজনেই মানসিক ভাবে অসুস্থ।’’ ঊষা অবশ্য বলছেন, ‘‘আমরা মা এবং মেয়ে একসঙ্গে থাকতাম। আমার মেয়ে দুশ্চিন্তার কারণে মারা গিয়েছে। কবে মারা গিয়েছে তা জানি না। আমাকে পাড়ায় কেউ পাত্তা দেয় না। আমার বাড়িতেও কেউ আসে না। মেয়ের দেহ কি আমি একা সৎকার করতে নিয়ে যেতে পারব? তাই মেয়ের দেহ বাড়িতেই রেখেছিলাম। আমিও এক দিন মারা যাব। সেই সময় দু’জনের দেহ একসঙ্গেই এই বাড়িতে থেকে যাবে।’’