বাবা, মা, ভাইয়ের সঙ্গে রোহিণি মিশ্র। ছবি: সংগৃহীত।
বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন বাবা। পড়াশোনার খরচ চালাতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ বোর্ডের স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। তাতে যদিও সাফল্য অধরা থাকেনি রোহিণী মিশ্রের। দশম এবং দ্বাদশের পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকার পরীক্ষা জেইই-তেও সফল হন তিনি। এর পরে আইআইটি খড়্গপুরে পড়াশোনা করতে করতেই পেয়েছেন চাকরি, যেখানে বছরে মাইনে ২১ লক্ষ টাকা। রোহিণীর ইচ্ছা, চাকরি পেয়ে আগে বাবার ঋণ শোধ করবেন।
গাজ়িয়াবাদের খোড়া এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকে রোহিণীর পরিবার। উত্তরপ্রদেশ, বিহার থেকে বহু মানুষ ভাগ্যান্বেষণে এসে গাজ়িয়াবাদের ওই এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেন। রোহিণীর বাবা ইন্দ্রমোহন মিশ্র তাঁদের মধ্যেই একজন। স্ত্রী সুষমা, কন্যা রোহিণী, পুত্র রোহিতকে নিয়ে এক কামরার ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেছিলেন তিনি। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তা দিয়ে দু’বেলা কোনও মতে খাওয়া জুটত। প্রথমে পুত্র-কন্যাকে বেসরকারি স্কুলে দিয়েছিলেন ইন্দ্রমোহন। কিন্তু বেশি দিন খরচ চালাতে পারেননি।
রোহিণী তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তেন। সে সময় তাঁকে সরকারি স্কুলে ভর্তি করে দেন ইন্দ্রমোহন। বই ছাড়া তিনি কিছু বুঝতেন না। নবম শ্রেণিতে যখন উঠেছিলেন, তখন টিউশন নিতে চেয়ে বাবাকে জানিয়েছিলেন। বাবা দিতে পারেননি। শেষে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে টিউশন নিতে পেরেছিলেন। ২০১৮ সালে দশম শ্রেণির পরীক্ষায় পঞ্চম হয়েছিলেন তিনি। ২০২০ সালে দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় জেলায় তৃতীয় হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকায় সফল হন। রোহিণী জানান, জেইই-র প্রস্তুতির জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। সেজন্য ঋণ নিয়েছিলেন তাঁর বাবা। খড়্গপুর আইআইটিতে পড়ার খরচের জন্য ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পাশ করতে এখনও চার মাস বাকি। এর মধ্যেই ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশনে চাকরি পেয়েছেন রোহিণী। বছরে বেতন ২১ লক্ষ টাকা। তাঁর লক্ষ্য, বেতন দিয়ে আপাতত পড়াশোনার জন্য নেওয়া ঋণ পরিশোধ।