পাশেই চাষ করা হয়েছিল আনাজ। ট্যাঙ্ক পড়ে দফা রফা জমির। সারেঙ্গায়। নিজস্ব চিত্র
হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে নলবাহিত পরিস্রুত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্পে গড়া সারেঙ্গার ফতেডাঙার রিজ়ার্ভার। তবে এই প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা বাঁকুড়া জেলার বাকি জলাধার বা রিজ়ার্ভারগুলির অবস্থা কী— তা নিয়ে এখন প্রশ্ন সব মহলেই। রাজ্য স্তরেও এ নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছে।
রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র শুক্রবার বলেন, “এই প্রকল্পে বাঁকুড়ায় জেলায় বহু রিজ়ার্ভার গড়া হয়েছে। সেগুলির অবস্থা জানা দরকার। দফতরের জেলা স্তরের ইঞ্জিনিয়ারদের রিজ়ার্ভারগুলি পরিদর্শন করে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হবে। শীঘ্রই সেই নির্দেশ দেওয়া হবে।”
বছর চারেক আগে তৈরি করা ফতেডাঙার সাত লক্ষ গ্যালনের রিজ়ার্ভার বুধবার বিকেলে নিমেষে ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মন্ত্রী তার পরেই তদন্তের নির্দেশ দেন। বৃহস্পতিবার ঘটনার তদন্তে রাজ্য জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের তরফে এক জন চিফ ইঞ্জিনিয়ারের নেতৃত্বে দুই এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জেলায় আসেন। বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে রিজ়ার্ভারের নির্মাণ কাজের নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান তাঁরা। আগামী সোমবার তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট মন্ত্রীকে দেওয়ার কথা তাঁদের।
বাঁকুড়ার জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফতেডাঙার ওই রিজ়ার্ভার নির্মাণের সময় জেলায় দায়িত্বে থাকা জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কয়েকজন জুনিয়র ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে তদন্তের জন্য এ দিন কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়।
সৌমেনবাবু বলেন, “রিজ়ার্ভারটি গড়েছিল একটি সংস্থা। তবে গোটা কাজের উপরে নজরদারি চালানোর দায়িত্ব ছিল দফতরের আধিকারিকদের উপরেই। তাই তদন্তে সকলের ভূমিকাই দেখা হচ্ছে।”
ঘটনার দু’দিন পরেও অবশ্য ওই রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়ার কারণ নিয়ে ধন্দ কাটেনি দফতরের জেলা কর্তাদের। দফতরের এক কর্তা এ দিন দাবি করেন, “নির্মাণকারী সংস্থাই মাটি পরীক্ষা করিয়েছিল। জলাধারের নকশা ও পরিকল্পনা খতিয়ে দেখে স্বীকৃতি দিয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তিন বছর ধরে ওই রিজ়ার্ভারের নির্মাণকাজে কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি। হঠাৎ করে কী করে ভেঙে পড়ল, বুঝতে পারছি না।”
ঘটনার পরেই অবশ্য বিজেপি ও সিপিএম এক যোগে রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘কাটমানি’ নিয়ে নিম্ন মানের কাজ করানোর অভিযোগ তুলেছে। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
এ দিকে রিজ়ার্ভার ভেঙে পড়লেও বৃহস্পতিবার থেকে ফের ফতেডাঙা-সহ ওই জলাধারের সঙ্গে যুক্ত ২৩টি মৌজাতেই জল পরিষেবা চালু করেছেন জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কর্মীরা। তা নিয়ে বাসিন্দাদের স্বস্তি ফিরলেও শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের খোঁজ করতে না যাওয়ায় ক্ষোভ ছিল একাংশের মধ্যে।
শুক্রবার ফতেডাঙায় যান বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি মৃত্যুঞ্জয় মুর্মু, রাইপুরের বিধায়ক বীরেন্দ্রনাথ টুডু। ওই জলাধার ভেঙে পড়ায় আশপাশের কিছু চাষ জমির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষ সেই কথা জনপ্রতিনিধিদের কাছে তুলে ধরেন। সভাধিপতির আশ্বাস, “ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।”