Maoist poster

‘মাওবাদী’ পোস্টার, কৌতূহল খয়রাশোলে

যদিও ২০১০ সালের পর থেকে উন্নয়ন এবং জনসংযোগ বৃদ্ধিকে হাতিয়ার করায় ক্রমশ কমেছে মাওবাদী গতিবিধি।

Advertisement

দয়াল সেনগুপ্ত 

খয়রাশোল শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৬:৪২
Share:

এই সেই পোস্টার। নিজস্ব চিত্র

পাড়ুইয়ে পাওয়া গিয়েছিল। এ বার সাদা কাগজের উপরে লাল কালিতে লেখা কয়েকটি মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার মিলল খয়রাশোল ব্লকে। রবিবার সকালে ওই ব্লকের লোকপুর থানা এলাকার খরিকাবাদ গ্রামের একটি নির্মীয়মাণ বাড়ির দেওয়ালে এমনই গোটা তিনেক পোস্টার চোখে পড়ে স্থানীয়দের। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে সেগুলি ছিঁড়ে দেয়।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পোস্টারগুলিতে লেখা ছিল ‘মাওবাদ জিন্দাবাদ, হেরা ফেরি চলবে না। দাদাগিরি চলবে না। লাশ পড়বে’। কোনও পোস্টারে লেখা, ‘মাওবাদ এক হও। পুলিশ-প্রশাসন মুর্দাবাদ। সিআরপিএফ চলবে না’। এই পোস্টারের সঙ্গে আদৌ মাওবাদীদের কোনও যোগ আছে, নাকি কেউ মজা করেছে, এটা স্পষ্ট নয়। প্রকাশ্যে ওই পোস্টার নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি জেলা পুলিশ। তবে,খয়রাশোল ব্লক বলেই পোস্টারের বিষয়টিকে খুব হাল্কা ভাবে নিচ্ছেন না জেলা পুলিশের কর্তারা। তাঁদেরই এক জন বলছেন, ‘‘এটা মনে রাখতে হবে যে, ঝাড়খণ্ড সীমানা লাগোয়া বীরভূমে বাম আমলে একাধিক বার মাওবাদী নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছিল খয়রাশোলেই।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অতীতে অনিয়মিত ভাবে মাওবাদী পোস্টারও পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকায়। প্রথম দিকে ওই সব পোস্টারকে আমল না দিলেও ২০০৭ সালের পর থেকে কয়েকটি হিংসাত্মক ঘটনায় টনক নড়ে পুলিশ-প্রশাসনের। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে খয়রাশোলের ভীমগড়া ও পাঁচড়া রেল লাইনের মাঝে মাওবাদীরা বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০০৮ সালে রাজনগর থানা এলাকায় পাঁচ মাসের ভিতরে দুই সিপিএম নেতাকে খুন করে দায় স্বীকার করে মাওবাদীরা। এর পরে খয়রাশোলে একটি মোবাইল সংস্থার টাওয়ার উড়িয়ে দেওয়া, প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সভাপতিকে খুন, তারাপুরে খুন, বিস্ফোরক উদ্ধার—এমন নানা ঘটনায় মাওবাদী যোগসূত্রের তত্ত্ব উঠে এসেছিল।

Advertisement

পরবর্তী সময়ে রাজনগর, দুবরাজপুর, মুরারই ১, নলহাটি ১, রামপুরহাট ১, মহম্মদবাজার, খয়রাশোল— এই সাতটি ব্লককে মাওবাদী প্রভাবিত হিসেবে ঘোষণা করে রাজ্য সরকার। মাওবাদীদের উপস্থিতির জন্যই খয়রাশোল ও রাজনগরের আরও দু’টি থানা তৈরি হয়। বর্তমানে ১১টি থানা মাওবাদী অধ্যুষিত বলে চিহ্নিত। তবে বিশেষ নজরে এখনও খায়রাশোল। এখানেই রয়েছে মাওবাদী মোকিবালায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী।

যদিও ২০১০ সালের পর থেকে উন্নয়ন এবং জনসংযোগ বৃদ্ধিকে হাতিয়ার করায় ক্রমশ কমেছে মাওবাদী গতিবিধি। কিন্তু দীর্ঘদিন পরে হঠাৎ খরিকাবাদের পোস্টার সাঁটানোর ঘটনা আবার চর্চায় এনেছে অতীতের দিনগুলি। ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে খয়রাশোলের দু’টি থানার বিস্তীর্ণ করিডর রয়েছে। খয়রাশোলের এমন গ্রাম রয়েছে, যার বাড়ির উঠোন ঝাড়খণ্ডে, বসত খয়রাশোলে। এমন গ্রাম রয়েছে, যেখানকার বাসিন্দাদের ব্লক অফিস বা পোস্ট অফিস, পঞ্চায়েতে আসতে হলে ঝাড়খণ্ডের দু’টি গ্রাম পেরিয়ে আসতে হয়।

কেউ কেউ আবার মনে করছেন, এটা তৃণমূল বিরোধীদের কারও কাজও হতে পারে। এমনিতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ও নানা দুর্নীতির অভিযোগে খয়রাশোল ব্লকে শাসকদলের সমর্থন অনেকটাই কমেছে। ক্রমশ বিপক্ষ রাজনৈতিক দল জায়গা শক্ত করছে। গত লোকসভা নির্বাচনে সেটা প্রমাণ হয়েছে। সামনে বিধানসভা নির্বাচন। এই আবহে কেউ স্রেফ মজা করে মাওবাদীদে নামাঙ্কিত পোস্টার সাঁটিয়ে হাওয়া গরম করতে পারে —সে সম্ভাবনাও পুলিশ মাথায় রেখেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement