গ্রেফতারির সেই দিন। ২০২২-এর ১১ অগস্ট বোলপুরের নিচুপট্টির বাড়ি থেকে অনুব্রত মণ্ডলকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে সিবিআই। —ফাইল চিত্র।
প্রায় দু’বছর পরে সিবিআইয়ের গরু পাচার মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন পেলেন বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। মঙ্গলবার তাঁর জামিন মঞ্জুর করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বেলা এম ত্রিবেদী এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চ। যদিও তিহাড় জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না অনুব্রত। কারণ, ইডির মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে দিল্লি হাই কোর্টে। তবে, জেলা তৃণমূলের একাংশের আশা, শীঘ্রই ইডি-র মামলাতেও জামি পেয়ে জেলায় ফিরে আসবেন তাঁদের ‘কেষ্টদা’।
এক মসয়ে জেলার রাজনীতিতে অনুব্রতের বিরোধী হিসাবে পরিচিত, বর্তমানে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য এবং জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই রায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মী, সকলেই খুশি। অনুব্রত মণ্ডলকে মিথ্যা মামলায় জেলে রাখা হয়েছে, বারবার বলেছি। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ছাড়া যে কিছু নয়, আদালত জামিন দেওয়ায় সেটা প্রমাণিত হল।’’ কাজলের সংযোজন, ‘‘কয়েকটা দিন অপেক্ষা করুন। ইডি-র মামলাতেও জামিন পাবেন তিনি।’’
মঙ্গলবার সকালে এই খবর চাউর হতেই সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছেন কেষ্ট অনু্গামীরা। তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই খবরে জেলা নেতা-কর্মীদের মধ্যে খুশির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। সকলের ধারণা এখনই জেলমুক্তি না-হলেও, দ্রুত তিনি মুক্তি পাবেন। আমরাও আশা করছি, দুর্গাপুজোর আগেই তিনি ফিরবেন। সামনেই ইডি মামলার শুনানি আছে।’’
যদিও তৃণমূল সূত্রের খবর, জামিন-সংবাদ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে দলের তরফে। জেলা তৃণমূলের এক নেতার দাবি, শীর্ষ নেতৃত্বের স্পষ্ট নির্দেশ, কোনও উচ্ছ্বাস প্রকাশ নয়। কারণ, একটি মাত্র মামলায় জামিন হয়েছে। জেলমুক্তি ঘটেনি। তাঁর কথায়, ‘‘বেশি উচ্ছ্বাস প্রকাশে পাছে প্রভাবশালী তকমা নতুন করে দেখা দেয় সেই জন্যই এই নির্দেশ।’’ আর এক নেতা আবার বলছেন, ‘‘কেষ্টদা সত্যিই জেলায় ফিরলে অনেকের রক্তচাপ বেড়ে যাবে।’’
শাসকদল ইতিবাচক হিসাবে দেখলেও, বিরোধীরা বিষয়টিকে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ। বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা বলছেন, ‘‘সবে সন্ধ্যা, ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরি।’’ কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মিল্টন রশিদ বলেন, ‘‘জামিন নিয়ে কথা বলার জায়গা নেই। তবে, জামিন মানেই কিন্তু মামলা থেকে মু্ক্তি নয়।’’ তবে, এ ক্ষেত্রেও তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘আঁতাঁত’ দেখতে পাচ্ছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, ‘‘জামিন পাওয়া এক জন মানুষের অধিকার। আমরা চাই, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্তটা সঠিক ভাবে হোক। কিন্তু, ইডি-সিবিআই দু’বছরও চার্জশিট জমা দিতে পারল না। এটা কি রাজ্য-কেন্দ্র বোঝাপড়ারই অঙ্গ নয়?’’
২০২২ সালের ১১ অগস্ট গরু পাচার মামলায় বোলপুরের নিচুপট্টি এলাকায় নিজের বাড়ি থেকেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন অনুব্রত। প্রথমে আসানসোল সংশোধনাগারে রাখা হয়েছিল কেষ্টকে। পরে গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডলকে ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। তাঁকে দিল্লি নিয়ে গিয়ে জি়জ্ঞাসাবাদ করার তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু, বেশ কয়েকটি ঘটনার জন্য ’২৩ সালের মার্চের আগে অনুব্রতকে দিল্লি নিয়ে যেতে পারেনি ইডি। তার পর থেকেই তিনি তিহাড় জেলেই বন্দি। গরু পাচার মামলায় অনুব্রতের মেয়ে সুকন্যাকেও গত বছর গ্রেফতার করে ইডি। সুকন্যাও তিহাড় জেলে বন্দি।
পাক্কা দু’বছর পরে সিবিআইয়ের করা মামলায় অনুব্রত শর্তসাপেক্ষ জামিন পাওয়ায় খুশি হয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী নিজেও লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে জেলায় এসে জানিয়েছিলেন, কেষ্ট ফিরলে তাঁকে ফের দায়িত্ব দেবেন। জেলা তৃণমূলের এক কেষ্ট-ঘনিষ্ঠ নেতা মনে করালেন, দীর্ঘদিন অনুব্রত না-থাকলেও জেলা তৃণমূলের সভাপতি পদে তাঁর স্থলাভিষিক্ত কাউকে করা হয়নি। তাঁকে পদচ্যুতও করা হয়নি। শুধু অনুব্রতের অনুপস্থিতিতে কোর কমিটি বীরভূম সংগঠনের দায়িত্বে থাকবে বলে শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন।
এ দিন সিবিআইয়ের মামলায় জামিন পাওয়ার পরে সেই অনুব্রতেরই জেলায় ফেরা নিয়ে চর্চা শুরু হল।