ভাঙা ঘরে নাতিকে নিয়ে বাস জবা মান্ডির। —নিজস্ব চিত্র।
বছর তিনেক আগে এমনই নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ধসে গিয়েছিল তিনটে মাটির দেওয়াল। তারপর থেকে দাঁড়িয়ে থাকা একটা দেওয়াল আর সেখান থেকে টাঙানো একটা ত্রিপলের তলায় ঠাঁই হয়েছে বৃদ্ধা জবা মান্ডি ও তাঁর দশ বছরের নাতি লক্ষ্মীকান্তের। বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ব্লকের বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের বড়ামারা গ্রামে সম্প্রতি দেওয়াল ধসে তিন শিশুর মৃত্যু হয়। তারপর থেকে ওই একই পঞ্চায়েতের পিয়ারবেড়া গ্রামের জবা মান্ডি ও তাঁর নাতি লক্ষ্মীকান্তকে নিয়ে চিন্তায় ঘুম উড়েছে পড়শিদের। তাঁদের মধ্যে মালতি হেমব্রম, চিন্তামণি হেমব্রমদের দাবি, ‘‘দুর্ঘটনা ঘটে গেলে, ক’দিন হইচই হবে। তারপরে আর কিছু হবে না। তাই খারাপ কিছু ঘটনার আগে প্রশাসন এখনই দিদা-নাতির মাথা গোঁজার ব্যবস্থা করে দিক।’’ বিষ্ণুপুরের বিডিও শতদল দত্ত বলেন, ‘‘ওই পরিবারের খবর জানা ছিল না। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
স্থানীয় সূত্রে খবর, টিনের চালা কাঁচাবাড়িতে নাতি ও মেয়েকে নিয়ে বাস করতেন জবা। স্বামী বছর পনেরো আগে মারা যান। মেয়ে মারা যান মাস তিনেক আগে। ছোট্ট নাতিই এখন তাঁর একমাত্র সহায়। কিন্তু এই টানা বৃষ্টিতে নাতিকে নিয়ে একটা ত্রিপলের নীচে বাস করতে হিমশিম খাচ্ছেন বৃদ্ধা।
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কিছুই নেই। মাথায় ছাউনি নেই। এখন দিনমজুরির কাজ নেই। রেশনের চাল-আটাও বাড়ন্ত। তা-ই জমিয়ে রেখে অল্প অল্প করে খাই। দুর্বল দেওয়াল কখন ঘাড়ের উপরে এসে পড়ে, তাই নাতিকে নিয়ে খুব ভয়ে ভয়ে থাকি।’’ তাঁর আক্ষেপ, ঘর ভাঙার পরে বহুবার পঞ্চায়েতে ঘর চাইতে গিয়েছেন। ত্রিপল ছাড়া আর কিছু মেলেনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশি বৃষ্টি হলে, তাঁরা নিজেদের ঘরে জবা ও তাঁর নাতিকে ডেকে নেন। কিন্তু তাঁদেরও ঘরে বেশি জায়গা নেই। ফলে সবারই সমস্যা হয়।
স্থানীয় বাঁকাদহ পঞ্চায়েতের প্রধান রামপ্রসাদ সাহা জানান, জবা স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়িতে রাতে থাকেন।
তিনি বলেন, ‘‘আবাস যোজনায় সমীক্ষায় জবাদেবীর নাম আছে। টাকা এলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিনি সরকারি বাড়ি পাবেন। তবে আপাতত তাঁকে একটা আস্তানা গড়ে দেওয়ার জন্য কয়েকজনকে অনুরোধ করা হয়েছে।’’ আশ্বাস দিয়েছেন বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেখা বাউরিও।