—ফাইল চিত্র।
নভেম্বরের গোড়ায় বাঁকুড়া ১ ব্লকের চতুর্ডিহি গ্রামের আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ওই গ্রাম থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সুনুকপাহাড়ি হাটতলায় আগামী বুধবার রাজনৈতিক জনসভা করার কথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিচ্ছে জেলা তৃণমূল। তেমনটা হলে, করোনা-আবহে এটাই হতে চলেছে জেলার সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক সভা। তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে জেলা রাজনীতিতে। পাশাপাশি একটা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে, এত জনসমাগম হলে দূরত্ব-বিধি কতদূর মানা যাবে। যদিও জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, দূরত্ব-বিধি ও স্বাস্থ্য-বিধি মানার সব প্রস্তুতি তাঁরা নিয়ে রাখছেন। সেই মতো কর্মীদের কাছেও নির্দেশ পাঠানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রীর একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়ে সোমবার বাঁকুড়া জেলায় আসার কথা। তার মধ্যে প্রশাসনিক কর্মসূচির সঙ্গে রাজনৈতিক কাজও থাকছে বলে সূত্রের খবর। সামনেই বিধানসভা ভোট। তাই মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে বিধানসভা ভোটের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু হয়েছে জেলা তৃণমূল শিবিরে।
শুক্রবার বাঁকুড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘জেলার প্রতিটি বুথ থেকে ৫০ জন মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর রাজনৈতিক জনসভায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাঁকুড়া জেলায় ৩,২৫৯টি বুথ রয়েছে। লোকজন আনতে প্রায় ১,৬০০টি বড় গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
তবে এই পরিস্থিতিতে বড় মাপের সভা করা কতটা যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ, পেশায় চিকিৎসক সুভাষ সরকার। তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা চাইলেই বাঁকুড়ায় অমিতজির সভার আয়োজন করে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষের জমায়েত করতে পারতাম। কিন্তু বিজেপি একটা দায়িত্ববান দল বলেই আয়োজন করা হয়নি। যেখানে আদালত পুজোয় জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করছে, সেখানে রাজ্যের শাসকদলই নিজেদের ক্ষমতা জরিপ করতে নিয়ম ভাঙছে!’’ শ্যামলবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘দেশজুড়ে যখন লকডাউন চলছিল, সে সময়েও বিজেপি বিভিন্ন জায়গায় জমায়েত করে সভা করেছে। তাই ওঁদের মুখে এ সব মানায় না। আমরা স্বাস্থ্য-বিধি মেনেই যা করার করব।’’
কী ভাবে মানা হবে স্বাস্থ্য-বিধি?
শ্যামলবাবুর দাবি, ‘‘তৃণমূলের ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্বকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গাড়িতে ওঠার আগে ও সভাস্থলে নামার সময় প্রত্যেকের হাতে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করতে হবে। সে জন্য প্রতিটি গাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমান স্যানিটাইজ়ার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভায় আসা প্রত্যেকের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যাঁরা মাস্ক নিয়ে আসতে ভুলে যাবেন, দলের তরফে তাঁদের মাস্ক দেওয়া হবে।’’ শ্যামলবাবুর আরও দাবি, সুনুকপাহাড়ির হাটতলায় কয়েকশো বিঘা জমি রয়েছে। ফলে সেখানে জমায়েত হলেও পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা যাবে। দূরত্ব যাতে বজায় থাকে, সে জন্য দলের স্বেচ্ছাসেবীরা নজর রাখবেন। শ্যামলবাবুর সংযোজন: ‘‘মুখ্যমন্ত্রী আসার আগে দলের জেলা নেতারা করোনা পরীক্ষা করাবেন। কেউ আক্রান্ত হলে কর্মসূচিতে যাবেন না।’’
বিধানসভা ভোটের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর এই জেলা সফরের রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেকখানি বলে দাবি করছেন জেলা রাজনীতির ওঠাপড়ার নিয়মিত পর্যবেক্ষকেরা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলার ১২টি বিধানসভাতেই ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপির কাছে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে বাঁকুড়ায় দলীয় সভায় এসে দলকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ বারের সফরে দলকে তিনি কী নির্দেশ দেন, তা নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে।
বিজেপি সাংসদ সুভাষবাবু দাবি করেন, ‘‘এই জেলার মানুষ তৃণমূলকে ছুড়ে ফেলেছে। ভোটের মুখে জঙ্গলমহলে এসে ‘ড্যামেজ কন্ট্রোল’ করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। চতুর্ডিহি গ্রামে অমিতজি এসেছিলেন বলেই সুনুকপাহাড়িকে সভাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে তৃণমূল।’’
শ্যামলবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘অমিত শাহ কেবল ছবি তোলাতে একটি আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজের নাটক করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী জেলার জন্য এক গুচ্ছ কাজ করে সভা করতে আসছেন। অনেক লোকের জমায়েত হবে বলেই আমরা
সুনুকপাহাড়িকে বেছেছি।’’