বিশ্বভারতীতে অত্যাচার চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ছবি ভিডিয়ো থেকে নেওয়া।
বিশ্বভারতীর গৈরিকীকরণ করা হচ্ছে বলে আবার অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ এবং এক অধ্যাপকের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমে মমতা বলেন, ‘‘ক্ষমতার জোরে গৈরিকীকরণের জন্য কেউ যদি ভাবেন ছাত্র, অধ্যাপক, কর্মচারীদের বুলডোজ় করবেন, তা হলে কেউ ওদের সঙ্গে না থাকলেও আমি থাকব।’’ বিশ্বভারতীর পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের উপর ‘নানা অত্যাচার’ চলছে বলেও সরব হয়েছেন মমতা।
বিশ্বভারতীতে বিভিন্ন বিষয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের একাংশ। বিক্ষোভের কারণে একাধিক পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে দাবি। ছাত্রবিক্ষোভে উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে বিশ্বভারতীর অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যকে শোকজ করেছেন উপাচার্য। গত ২৩ নভেম্বর উপাচার্যের ইস্তফার দাবিতে তেতে ওঠে বিশ্বভারতী। ছাত্রদের দাবি, বিদ্যুতের কাছে কয়েকটি দাবি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পড়ুয়াদের লক্ষ্য করে উপাচার্য তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের গুলি চালানোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের ধস্তাধস্তিও বাধে। এর পরই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। বিদ্যুতের দাবি, তাঁকে হেনস্থা করেছেন পড়ুয়ারাই। এই ঘটনার পর মঙ্গলবার বোলপুরের রাঙাবিতানে (যেখানে রয়েছেন মমতা) মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন বিশ্বভারতীর ১৩ জন পড়ুয়া, অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এবং প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর।
বিশ্বভারতীর সামগ্রিক বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। মীনাক্ষী ভট্টাচার্য নামে এক ছাত্রী বলেছেন, ‘‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে যাইনি। বিশ্বভারতীর সামগ্রিক পরিস্থিতি জানিয়েছি। পড়ুয়াদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। তিনি বলেছেন, ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি দেখবেন।’’ যে সব পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা হয়েছে, তাঁরা চাইলে রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন মুখ্যমন্ত্রী, এ কথাও জানিয়েছেন পড়ুয়ারা।
বৈঠক শেষে মমতা বলেন, ‘‘আমি নিজে ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে আসা লোক। আন্দোলনই আমার অভিমুখ। পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, কারও কারও হৃদয়টাই নেই। ছাত্রছাত্রীদের কাউকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। অধ্যাপকদের বরখাস্ত করা হচ্ছে। কর্মচারীদের উপর জুলুম চলছে। বিশ্বভারতী নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। কিন্তু এ বার যা শুনলাম, কোনও ভাবেই কাম্য নয়।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিশ্বভারতীর পড়ুয়া, অধ্যাপক, আশ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে। ‘জনমত নির্বিশেষে’ প্রত্যেকের বিশ্বভারতীকে বাঁচানোর দায়িত্ব রয়েছে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পরই বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং বিজেপিকে নিশানা করে মমতা বলেন, ‘‘আমি কোনও ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে চাই না। কিন্তু ক্ষমতার জোরে গৈরিকীকরণ করতে পড়ুয়া, অধ্যাপক, কর্মচারীদের বুলডোজ় করার কথা যদি কেউ ভাবেন, তা হলে আর কেউ না থাকুক, আমি ওদের সঙ্গে থাকব।’’
জমি বিবাদ নিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গে বিশ্বভারতীর সংঘাত চরমে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে সোমবার বোলপুর সফরে গিয়ে প্রথমে অমর্ত্যের বাড়ি ‘প্রতীচী’তে যান। সেখানে নোবেলজয়ীর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলেন। সরকারি নথি দেখিয়ে মমতা জানান, জমি বিবাদে নোবেলজয়ী যে কথা বলেছেন তা ঠিক। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর ওই নথি ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মঙ্গলবার দাবি করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। এই আবহে পড়ুয়া এবং অধ্যাপকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আবার যে ভাবে সুর চড়ালেন মমতা, তা নয়া মাত্রা যোগ করল।