অমর্ত্য সেন বিশ্বভারতীর জমি দখল করে রেখেছেন, এই দাবিতেই অনড় বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। মমতার দাবি ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বললেন তিনি। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বাড়ি সম্পর্কিত যে কাগজ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেখাচ্ছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়। মঙ্গলবার এই দাবি করেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুধু তাই নয়, অমর্ত্য যে তাঁদের ১৩ ডেসিম্যাল জমি দখল করে রেখেছেন, সেই দাবিতেও তাঁরা অনড়। একই সঙ্গে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দাবি করেছেন, সরকার পক্ষ, প্রশাসন এবং বিশ্বভারতীর লোকজনের উপস্থিতিতে জমির মাপজোক করা হোক।
সোমবার অমর্ত্যের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। নোবেলজয়ীর জমি-বিতর্ক প্রসঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একহাত নিয়ে তাঁদের দাবি নাকচ করে দেন। পাশাপাশি, ব্লকের ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আধিকারিক (বিএলআরও)-এর উপস্থিতিতে অমর্ত্যের হাতে জমির কাগজপত্রও তুলে দেন মমতা। এর ২৪ ঘণ্টা না কাটতেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন বিদ্যুৎ। তাঁর দাবি, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যে কাগজপত্র দেখাচ্ছেন তা প্রাসঙ্গিক নয়।’’ উপাচার্য জানান, তাঁদের কাছে যে নথি রয়েছে, তাতে অমর্ত্য সেনের ১.২৫ একর জমিই রয়েছে। উপাচার্যের সংযোজন, ‘‘অমর্ত্য সেনের কোনও অপমান হোক সেটা চাই না। কারণ, তিনি এখনও পর্যন্ত আলোচনায় বসে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার জন্য আবেদন করেছেন।’’ একই সঙ্গে বিদ্যুতের দাবি, ‘‘সরকার পক্ষ, প্রশাসনের লোকজন থাকুন। বিশ্বভারতীর লোকজনও (উপস্থিত) থাকুন। সবার উপস্থিতিতে জমির মাপজোক করা হোক।’’
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ঠিক করে কেন্দ্রীয় সরকার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা মনে রাখা উচিত ছিল।’’ জমি বিতর্কে উপাচার্যের দাবি, বিশ্বভারতীর ‘বিপুল পরিমাণ’ জমি দখল হয়ে গিয়েছে। নিয়ম মেনে সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টাই তিনি করছেন বলে দাবি করেন বিদ্যুৎ। সে কারণে অমর্ত্য ওই জমি ফিরিয়ে দিয়ে অন্যদের বার্তা দিন, এমনটাই চান উপাচার্য।
এই জমি বিবাদের মধ্যে একটি সরকারি নথি (সেটির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) প্রকাশ্যে এসেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে। প্রকাশ্যে আসা সরকারি নথির প্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্য সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ়ে রয়েছে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের একটি সূত্রেরও দাবি ছিল, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই।
সোমবার নোবেলজয়ীর শান্তিনিকেতনের বাড়ি ‘প্রতীচী’তে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর পক্ষ থেকে ২৪ জানুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছিল। তিনি নাকি ১৩ ডেসিম্যাল জমি দখল করে রেখেছেন। আমি ক’দিন ধরে অনেক ভাবে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছি। বিশ্বভারতীকে যখন জমিটা দেওয়া হয়েছিল, সেই কাগজ আমি নিয়ে এসেছি।’’ এর পরেই ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন দাগের কোন জমি দিয়েছিল তার বিবরণ পাঠ করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘‘যে জমিটা লিজ়ে দেওয়া হয়েছিল তা ১.৩৮৮ একর। আর ওরা (বিশ্বভারতী) বলছে ১.২৫ একর। ‘এল আর’ রেকর্ড বলছে, ১.৩৮ একর। তাই অমর্ত্য সেন ঠিক বলছেন। ১৯৫৬ সালের ‘আরএস’ রিপোর্টেও একই তথ্য রয়েছে।’’ পাশাপাশি, বিশ্বভারতীতে ইদানীং রাজনীতির ছোঁয়া লাগছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্ধারণ করেন সেন্ট্রাল গর্ভমেন্ট (কেন্দ্রীয় সরকার)। ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এটা মনে রাখা উচিত ছিল।’’ জমি বিতর্কে উপাচার্যের দাবি, বিশ্বভারতীর ‘বিপুল পরিমাণ’ জমি দখল হয়ে রয়েছে। তিনি নিয়ম মেনে সেগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। সে কারণেই তিনি চান অমর্ত্য ওই জমি ফিরিয়ে দিয়ে অন্যদের বার্তা দিন।