সৌজন্য: অভিজিৎ সাহার পাশে রামচন্দ্র ডোম। ছবি: কল্যাণ আচার্য
লড়াইয়ের ময়দানে এক ইঞ্চি জমি প্রতিপক্ষকে ছাড়বেন না তাঁরা। কিন্তু তা বাধা হল না রাজনৈতিক সৌজন্যে।
প্রতিদ্বন্দ্বী বয়োজ্যেষ্ঠ প্রার্থীর পায়ে হাত দিয়ে আশীর্বাদ চাইলেন এক জন। প্রত্যুত্তরে তাঁকে বুকে জড়িয়ে শুভেচ্ছা জানালেন ভোটযুদ্ধের প্রতিপক্ষ। এমনই বিরল দৃশ্যের সাক্ষী থাকলেন দু’দলের কর্মী-সমর্থক, পথচারীরা।
বুধবার সকাল ১০টা। কীর্ণাহার লক্ষ্মীতলা। এ দিন কীর্ণাহার বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিলে প্রচার শুরু করেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী রামচন্দ্র ডোম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন নানুরের দলীয় বিধায়ক শ্যামলী প্রধান, স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আনন্দ ভট্টাচার্য, জেলা কমিটির সদস্য মহম্মদ সরিফউদ্দিন। সেই মিছিল লক্ষ্মীতলার কাছে পৌঁছনোর সময় সেখানে প্রচারে বের হচ্ছিলেন একই কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ সাহা। রামচন্দ্রবাবুকে দেখে তিনি এগিয়ে যান। নিজের পরিচয় দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ চেয়ে নেন তাঁর কাছে। রামচন্দ্রবাবু তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলেন, ‘‘এগিয়ে চলুন।’’
তা দেখে অবাক আশপাশের মানুষ। আনাজ ব্যবসায়ী ওসমান আলি, স্কুলশিক্ষক সুরঞ্জন মণ্ডলের কথায়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এমন রাজনৈতিক শিষ্টাচার সহজে দেখা যায় না।’’ সিপিএম নেতা আনন্দবাবু বলেন, ‘‘রামদা বরাবর এই রকম। সব কিছুই খেলোয়াড়সুলভ মনোভাবে দেখেন।’’
অবশ্য রামচন্দ্রবাবুর এমন সৌজন্য আগেও দেখেছে জেলা। টানা ৭ বার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বোলপুর কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী অনুপম হাজরার কাছে পরাজিত হন তিনি। সে দিনও তাঁর মুখে হাসি ছিল অমলিন। ফল ঘোষণার পরে বোলপুরের গণনাকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আসার মুখে বিজয়ী অনুপমবাবুকে সামনে দেখে বুকে জড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন।
এ দিন রামচন্দ্রবাবু বলেন, ‘‘লড়াইটা লড়াইয়ের জায়গায় থাক। মানুষ হিসাবে সৌজন্যবোধ বজায় রাখতে দোষ কোথায়? একটি নতুন ছেলে লড়তে নেমে আমাকে প্রণাম করেছে। তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে উৎসাহিত করাই তো উচিত।’’
একই বক্তব্য অভিজিৎবাবুরও। তিনি বলেন, ‘‘উনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও বয়সে বড়। অভিজ্ঞ মানুষ। লড়তে নেমে অনেককেই তো প্রণাম করে আশীর্বাদ চাইছি। বাড়ির কাছে ওঁকে পেয়ে আশীর্বাদ নেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইনি।’’