প্রাক্তন শিক্ষকের সঙ্গে শ্যামসুন্দর নন্দী (বাঁ দিকে)। পুঞ্চায়। নিজস্ব চিত্র।
যাতায়াত করতেন। সেই সময়ের প্রধান শিক্ষক উপদেশ দিতেন, কিছু করে দেখাতে হবে। সেটা মন্ত্রের মতো জপ করেছেন সারা জীবন। ছোটবেলার স্কুলে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে এমনই স্মৃতিচারণে মাতলেন সিলিকোসিস নির্ণয়ের কিট তৈরি করা বিজ্ঞানী শ্যামসুন্দর নন্দী। মঙ্গলবার পুঞ্চার ন’পাড়া হাইস্কুলে এসে প্রাক্তন শিক্ষক ও সহপাঠীদের দেখে কিছুটা যেন আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলেন এই প্রাক্তনী।
উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়বে সিলিকোসিস, শ্যামসুন্দরের নেতৃত্বে গবেষণায় তৈরি হয়েছে তেমনই ‘কিট’। আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)-এর তত্ত্বাবধানে থাকা এনআইভি (ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি) এবং এনআইওএইচ (ন্যাশন্যাল ইনস্টিটিউট অব অকুপেশনাল হেলথ)-এর যৌথ গবেষণায় তা আবিষ্কার হয়েছে। সম্প্রতি আইসিএমআর এই কিটের অনুমোদন দিয়েছে। আদতে পুরুলিয়ার হুড়ার বড়গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর এনআইভি-র মুম্বই ইউনিটের সহ-অধিকর্তা পদে রয়েছেন।
এ দিন ন’পাড়া হাইস্কুলে এই বিজ্ঞানীকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে এসে তিনি বলেন, ‘‘স্কুলের শিক্ষকদের স্নেহ, আন্তরিকতা না থাকলে আমি আজ এই জায়গায় পৌঁছতে পারতাম না।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাম্যবিপ্লব মাহাতো বলেন, ‘‘শ্যামসুন্দর শুধু আমাদের স্কুলের নয়, দেশের গর্ব। ওঁকে সংবর্ধনা জানাতে পেরে স্কুল গর্ববোধ করছে।’’
এ দিন শ্যামসুন্দর বলেন, ‘‘সাইকেল ছিল না। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে আসতে হত। নবম শ্রেণিতে স্কুলের এক শিক্ষক পরীক্ষার মাধ্যমে একটি বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। বছরে বারোশো টাকা পাওয়ার পরে, শিক্ষক বললেন, ‘একটা সাইকেল কেনো’। সেই সাইকেল এখনও আমার কাছে আছে।’’ প্রয়াত প্রধান শিক্ষক অবনী শতপথীর স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ‘‘স্যর বলতেন, ‘কিছু করে দেখাও’। সে কথা আমি মন্ত্রের মতো জপ করি।’’ বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়াদের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘নিষ্ঠা ও পরিশ্রমই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি। জেলা থেকে এ বার কয়েক জন ডাক্তারি পরীক্ষায় সফল হয়েছে। সেটা ভাল লক্ষণ।’’
এ দিন বিজ্ঞানীর সঙ্গে স্কুলে এসেছিলেন তাঁর মা চম্পা নন্দী, স্ত্রী সঞ্চিতা নন্দী ও মেয়ে অনুষ্কা। সঞ্চিতা বলেন, ‘‘স্বামী প্রায়ই স্কুলের কথা বলেন। এখানে না এলে জানতে পারতাম না, কত স্নেহ-ভালবাসা ওঁর জন্য রয়েছে।’’ স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক অবিনাশ মাহাতো বলেন, ‘‘শ্যামসুন্দরকে স্কুলে সংবর্ধনার
মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের পড়ুয়াদের উৎসাহিত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল। আগামী দিনে এই স্কুল থেকে আরও শ্যামসুন্দর উঠে আসুক, এটাই চাই আমরা।’’