দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
দুর্ঘটনায় আহতদের সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা করানো গেলে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজে ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ নেই। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের হাতে দু’টি ‘ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স’ থাকলেও চালক ও স্বাস্থ্যকর্মী নেই। ফলে দুর্ঘটনার আহত মুমূর্ষুদের অনেক সময় উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে না। এ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজকে উদ্যোগী হতে চিঠি পাঠিয়েছে জেলা পুলিশ।
পুরুলিয়া ১ ব্লকের রুদড়া গ্রামের ভোলানাথ সিংয়ের বাবা বাইক দুর্ঘটনায় আহত হন। পুরুলিয়া মেডিক্যালে চিকিৎসা পাওয়া যায়নি। রাঁচীর হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও বাঁচানো যায়নি। ভোলানাথের কথায়, ‘‘পুরুলিয়া মেডিক্যালে সময়ে চিকিৎসা করানো গেলে হয়তো বাবাকে হারাতে হত না।’’ পুরুলিয়া মফস্সল থানার শ্যামপুরের বাসিন্দা ভগীরথ মাহাতোও জানান, পথ দুর্ঘটনায় তাঁর এক দাদু আহত হন। পুরুলিয়া মেডিক্যাল ঘুরে তাঁকেও রাঁচীতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
সমস্যার গুরুত্ব বুঝে ‘ট্রমা কেয়ার ইউনিট’ চালু করতে পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজের সুপারকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সুপার। ওই চিঠির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও পথ নিরাপত্তা কমিটির সভাপতিকেও। ওই চিঠিতে জানানো হয়েছে, ২০২২ এর সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ৭০ জন মারা গিয়েছেন শুধুমাত্র পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ট্রমা কেয়ার ইউনিট না থাকা এবং দুর্ঘটনায় গুরুতর আহতদের অন্যত্র স্থানান্তর করে দেওয়ার কারণে। জেলা পুলিশের ডিএসপি (ট্র্যাফিক) সুমনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা প্রয়োজনীয় চিঠিপত্র স্বাস্থ্য দফতরে দিয়েছি। তারা উদ্যোগী হয়েছে।’’
চিঠির প্রাপ্তিস্বীকার করে পুরুলিয়া মেডিক্যালের সুপার সুকমল বিষই বলেন, ‘‘আমাদের এখানে জরুরি পরিষেবা রয়েছে। কিন্তু দুর্ঘটনাগ্রস্তদের জন্য আলাদা কোনও ব্যবস্থা নেই। ট্রমা কেয়ার ইউনিটের প্রয়োজন আছে। সে ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য দফতরে চিঠি পাঠিয়েছি। ট্রমা কেয়ার ইউনিট চালু হলে আরও ভাল পরিষেবা দেওয়া যাবে।’’
জেলা পুলিশ একই সঙ্গে পুরুলিয়া জেলায় ট্রমা কেয়ার পরিষেবা যুক্ত চারটি অ্যাম্বুল্যান্স চালুরও আবেদন করেছে ওই চিঠিতে। বলরামপুর, ঝালদা, রঘুনাথপুর ও মানবাজারে ওই অ্যাম্বুল্যান্সগুলি রাখতে বলা হয়। তা হলে কাছাকাছি এলাকায় দুর্ঘটনায় আহতদের ওই অ্যাম্বুল্যান্সেই প্রাথমিক চিকিৎসা করে দ্রুত পুরুলিয়া মেডিক্যালে নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
যদিও পুরুলিয়া জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘‘শুধু ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেই হবে না, তার জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক চালক, সহকারী এবং স্বাস্থ্যকর্মী থাকাও প্রয়োজন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর অধীনে দু’টি ট্রমা কেয়ার অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। সেগুলি ভিআইপিদের সফরের সময় মজুত রাখা হয়। এ ছাড়া জরুরি ভিত্তিতেও ব্যবহার করা হয়। কিন্তু নিয়মিত চালানোর জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী ও চালক নেই।’’ (শেষ)