শুনশান পুরুলিয়া স্টেশন। নিজস্ব চিত্র
কুস্তাউরের পরে এ বার কোটশিলাও। তাদের জনজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার দাবিমতো পদক্ষেপ না করলে আগামী রবিবার থেকে কোটশিলাতেও রেল ও সড়ক অবরোধ করার হুঁশিয়ারি দিল আদিবাসী কুড়মি সমাজ। এর ফলে মানুষের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা অজিত মাহাতো বৃহস্পতিবার খেমাশুলিতে রওনা দেন। তার আগে কুস্তাউরে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করলে আমরাও আন্দোলনের মাত্রা বাড়াতে বাধ্য হব। সরকার যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় না বসে, তাহলে রবিবার থেকে কোটশিলা স্টেশনে এবং চাষমোড়-তুলিন রাজ্য সড়ক (পুরুলিয়া-রাঁচী রাস্তা) অবরোধ করা হবে। তার প্রচারও শুরু হয়ে গিয়েছে।’’ যদিও পুরুলিয়ার জেলাশাসক রজত নন্দা বলেন, ‘‘কোটশিলার অবরোধের বিষয়ে ওই সংগঠনের তরফে জেলা প্রশাসনকে কিছু জানানো হয়নি।’’ তবে এ দিন সংগঠের এক প্রতিনিধিদল জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
এ দিকে কুস্তাউর ও খেমাশুলির অবরোধের জেরে আদ্রা ও খড়্গপুর ডিভিশনে আজ, শুক্রবারও ৬০টি দূরপাল্লা ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেল জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওই দুই ডিভিশনে মোট ৮৭টি দূরপাল্লা ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়। ঘুরপথে চালানো হয় আটটি ট্রেন।
কুড়মি সম্প্রদায়কে জনজাতি তালিকাভুক্ত করার দাবিতে বুধবার থেকে আদ্রা-চান্ডিল শাখার কুস্তাউর স্টেশন এবং কুস্তাউর মোড়ে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়কে অবরোধ শুরু করে আদিবাসী কুড়মি সমাজ। সংগঠের মূল মানতা অজিতের দাবি, ‘‘গত সেপ্টেম্বরে আমরা যখন কুস্তাউর স্টেশনে রেল অবরোধ করেছিলাম, তখন রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, দেড় মাসের মধ্যে কেন্দ্র সরকারকে তারা ফারদার জাস্টিফিকেশন রিপোর্ট দেবে। কেন্দ্রকে রাজ্য একটি চিঠি দিলেও তাতে যা যা তথ্য চাওয়া হয়েছিল, তার উল্লেখ নেই। ওই চিঠি আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করেই পাঠানো হয়েছিল। সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে দাবির প্রতি সদর্থক দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রিপোর্ট পাঠাক।’’ জেলা প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, আন্দোলনের বিষয়ে নবান্নকে তারা সমস্ত তথ্য জানাচ্ছে।
এ দিন বেলার দিকে আদিবাসী কুড়মি সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সুজিতকুমার মাহাতো, সংগঠনের নেতা শশাঙ্কশেখর মাহাতো প্রমুখ জেলা পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করেন।
পরে সুজিত দাবি করেন, ‘‘আন্দোলনের বিষয় নিয়েই পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম।’’ জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উপরে আমাদের নজর রয়েছে।’’
এ দিন কুস্তাউর স্টেশনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, রেলপথের উপর ব্যানার ও পতাকা পুঁতে বিক্ষোভ চলছে। দিনের দিকে ভিড় কম থাকলেও বেলা গড়াতেই লাইনের উপরে অনেকে বসে পড়েন। কুস্তাউর স্টেশন ম্যানেজারের দফতর বন্ধ থাকলেও আরপিএফ এবং জিআরপি কর্মীরা স্টেশনে মোতায়েন রয়েছেন। অন্য দিকে, এ দিন পুরুলিয়া-সহ বিভিন্ন স্টেশনে গিয়ে শুনশান ছবি দেখা গিয়েছে।
এ দিকে আদিবাসী কুড়মি সমাজ পুরুলিয়া-মুরী শাখার (পুরুলিয়া-রাঁচী রেলপথ) কোটশিলা স্টেশন এবং কোটশিলায় পুরুলিয়া-রাঁচী সড়ক অবরোধ করার হুমকি দেওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়েছে। কুস্তাউর স্টেশনে অবরোধের জেরেই বহু ট্রেন বাতিল হয়েছে। কুস্তাউর মোড়ে অবরোধ চলায় বহু বাস চলাচলও বন্ধ। তার জেরে বুধবার থেকে ভোগান্তি চলছে।
রঘুনাথপুর থানার সগড়কা গ্রামের বাসিন্দা রাখহরি মাহাতো ওড়িশায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। জামশেদপুর হয়ে টাটানগর-পুরুলিয়া রুটের বাসে পুরুলিয়া এসে জানতে পারেন, রঘুনাথপুরগামী বাস বন্ধ। তিনি বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঘুরপথে রঘুনাথপুরে পৌঁছনো যাবে। কিন্তু সেখান থেকে বাড়ি কী ভাবে যাব,বুঝতে পারছি না।’’