প্রতিমায় মুকুট লাগানো হচ্ছে। রামপুরহাট থেকে তোলা। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সরস্বতী পুজো কবে আয়োজিত হবে, তা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়িয়েছে জেলার একাধিক স্কুলে। পঞ্চমী তিথি কবে, তা নিেয়ই এই ‘বিভ্রান্তি’। তাই এ বার সরস্বতী পুজো ২ ফেব্রুয়ারি রবিবার না কি ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার করা হবে, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত জেলার বহু স্কুল ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তবে পুরোহিতদের অনেকের মত, যেহেতু সূর্যোদয় রয়েছে সোমবার, তাই সেই তিথিই মানা উচিত।
শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশের মতে, পঞ্চমী তিথি রবিবারই দিনভর থাকছে। সোমবার সকালেই ছেড়ে যাচ্ছে। ফলে পুজো করতে হলে রবিবারই করা উচিত। আবার বেশ কিছু স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, তাঁরা এ নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। পুরোহিতের সঙ্গে কথা বলার পরই সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।
জানা গিয়েছে, বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা অনুসারে মাঘ মাসের ১৯ তারিখ, রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে সকাল ৯টা ১৬ মিনিটে। ২০ মাঘ, সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৬টা বেজে ৫৩ মিনিটে শেষ হয়ে যাচ্ছে পঞ্চমী তিথি। ফলে সরস্বতী পুজোর দিন ধার্য হয়েছে রবিবার। অন্য দিকে, গুপ্ত প্রেস পঞ্জিকা অনুসারে মাঘ মাসের ১৯ তারিখ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) পঞ্চমী তিথি শুরু হচ্ছে দুপুর ১২ টা ১২ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডে। পঞ্চমী তিথি থাকছে পরদিন (৩ ফেব্রুয়ারি) সোমবার সকাল ৯টা ৫৭ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড পর্যন্ত। সরকারি ক্যালেন্ডারেও সরস্বতী পুজো রবিবার।
তিথির সময়ফের এই ‘বিভ্রান্তি’র কারণ বলে জানাচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। রবিবার পুজো করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিকে টিপিপি প্রবীর সেনগুপ্ত বিদ্যালয়। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবারই বিদ্যালয়ে প্রতিমা আনা হবে। রবিবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ঘটস্থাপন ও পুজো আরম্ভের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক মামুন হাসান বলেন, ‘‘বিদ্যালয়ের যে শিক্ষক সরস্বতী পুজোর দায়িত্বে তাঁর মতামত নিয়েই এই সিদ্ধান্ত।’’ রবিবারই পুজো করার কথা ভেবেছে লাভপুর ব্লকের মহেশপুর মুরারীমোহন উচ্চবিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক তন্ময় মুখোপাধ্যায় জানান, মূলত দুটি কারণে সিদ্ধান্ত। প্রথমত, শনিবারটা বারের দিন ধরলে প্রতিমা আনা থেকে সাজানো সবটাই করা যাবে পড়ুয়াদের নিয়ে। রবিবার হলে সেটা সম্ভব হত না। আর রবিবার পঞ্চমী তিথি স্কুলের সময়েই পড়েছে। দ্বিতীয়ত, পুরোহিত পেতেও সুবিধে। সহমত পোষণ করে রবিবারেই পুজোর পক্ষে রাজনগরের ভবানীপুর শম্ভুনাথ উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মণিব্রত সিংহও।
সিদ্ধান্ত ঝুলে রয়েছে যে সব স্কুলে, সেগুলির অন্যতম মহম্মদবাজারের কেদারপুর সিবি উচ্চবিদ্যালয়, পটেলনগর অতুলভাবিনী নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়। ওই দু’টি স্কুলের প্রধানশিক্ষক হরিদাস দাস ও ভবানী দত্ত বলছেন, ‘‘দু’দিন তিথি থাকায় এখনও সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। পুরোহিতের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।’’ একই কথা বলেছেন দুবরাজপুর গার্লসের প্রধান শিক্ষিকা চাঁপা দে-ও। পুরোহিতদের অনেকের মত, সূর্যোদয় যে তিথিতে সেটাকেই ধরতে হবে। ফলে পুজো সোমবারই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁদের অন্যতম বোলপুর তারাশঙ্কর বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক নিত্যানন্দ বারুই বলছেন, ‘‘আমাদের স্কুলে যিনি পুজো করবেন, রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্কৃত পণ্ডিত, তিনি সূর্যোদয়ের তিথিকেই মান্যতা দিয়েছেন। বলেছেন তিথি থাকতে থাকতেই সংকল্প করতে হবে।’’
নবদ্বীপের সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিত শুভেন্দুকুমার সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন, হিন্দু শাস্ত্রে সমস্ত কৃত্য হয় সূর্যোদয়কে ঘিরে। সূর্যোদয়ের সময় যে তিথি থাকবে সেই তিথি ধরেই কাজ করতে হবে বলে তাঁর মত। বিভিন্ন পঞ্জিকা মতে যে সময় দেওয়া আছে, তাতে সূর্যোদয়ের সময় পঞ্চমী থাকছে সোমবারই। রবিবার সারাদিন পঞ্চমী থাকলেও সে দিন পঞ্চমী কৃত্য হওয়া বিধেয় নয় বলে জানাচ্ছেন তিনি।