ডাবুকের পরে কোমা বেহাত শাসকের

জেলা নেতৃত্বের দাবি, সোমবার দুপুরে সিউড়ির এক হোটেলে কোমা পঞ্চায়েতের সাত তৃণমূলের সদস্যের পাঁচ জন বিজেপিতে যোগ দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

দলবদল: বিজেপির পতাকা হাতে কোমা পঞ্চায়েতের সদস্যরা। সোমবার সিউড়িতে। নিজস্ব চিত্র

তৃণমূলের সাত সদস্যের মধ্যে প্রধান, উপপ্রধান সহ পাঁচ জন দলবদল করায় ময়ূরেশ্বর ১-এর ডাবুক গ্রাম পঞ্চায়েত তাদের দখলে এসেছে বলে দাবি করল বিজেপি। জুন মাসের ১৫ তারিখ একই ঘটনা ঘটেছিল ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ডাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতে। লোকসভা ভোটের পরে এই দুই পঞ্চায়েতে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তৈরি হয়েছে বলে দাবি নেতৃত্বের।

Advertisement

জেলা নেতৃত্বের দাবি, সোমবার দুপুরে সিউড়ির এক হোটেলে কোমা পঞ্চায়েতের সাত তৃণমূলের সদস্যের পাঁচ জন বিজেপিতে যোগ দেন। দলীয় পতাকা হাতে তুলে দেন বিজেপি জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলবদলকারীদের মধ্যে আছেন প্রধান ঝর্ণা বাগদি, উপপ্রধান সুমিত্রা টুডু ছাড়াও দুঃখহরণ বাগদি, চন্দনা বাগদি এবং মুস্তাফা কামাল। দলবদলের কথা মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের সিউড়ি ২ ব্লক সভাপতি নুরুল ইসলাম। তাঁর যুক্তি, ‘‘কয়েক দিন ধরে বিজেপির ছত্রছায়ায় কিছু সমাজবিরোধী এলাকা দাপিয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে ভয় দেখিয়েছে। তাই এই দলবদল। ভয় কাটলেই ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসবে পঞ্চায়েতের সমীকরণ।’’

কাউকে ভয় দেখানোর অভিযোগ মানতে চাননি বিজেপির জেলা সভাপতি শ্যামাপদ মণ্ডল। তাঁর বরং দাবি, ‘‘মাসখানেক আগে কোমা পঞ্চায়েতের প্রধানের নেতৃত্বে উপপ্রধান-সহ চার সদস্য বিজেপিতে যোগদানের জন্য স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এ মাসের চার তারিখ প্রধান সহ বাকিরা দলবদলের জন্যে আমার কাছে আবেদন জানান। সেই আবেদনের মান্যতা দিয়েই দলে নেওয়া হয়েছে।’’ পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পরে এলাকায় ভাল কাজ হবে বলে জানিয়েছেন জেলা সভাপতি।

Advertisement

কোমা পঞ্চায়েতের প্রধান ঝর্ণা বাগদিও বলেছেন, ‘‘চাপের কাছে বা ভয় পেয়ে নয়। নরেন্দ্র মোদীর আদর্শে উজ্জিবীত হয়েই বিজেপিতে যোগদান করেছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েও মানুষের জন্য কিছু কাজ করতে পারছিলাম না। তাই বিজেপিতে এলাম।’’ প্রায় একই সুর পঞ্চায়েতের সদস্য দুঃখহরণ বাগদির। তিনি বলেন, ‘‘আমরা নামেই পঞ্চায়েতের সদস্য ছিলাম। কখনও কোনও সম্মান পাইনি।’’

সপ্তাহ তিনেক আগে একই ঘটনা ঘটেছিল ময়ূরেশ্বর ১ পঞ্চায়েত সমিতির ডাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই দিন পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান কল্যাণী গোস্বামী, উপপ্রধান পলাশ রজক-সহ পাঁচ তৃণমূল সদস্য বিজেপিতে যোগদান করেন। তাতে পঞ্চায়েতে পাল্লাভারি হয় বিজেপির। ১৩ আসনের ওই পঞ্চায়েতে ১০টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ছিল তৃণমূল। বিজেপি দু’টি আসন ও একটি আসন পায় সিপিএম। ভোট মিটতে বাম সদস্য বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় বিজেপির সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল তিন। এখন দশ তৃণমূল সদস্যের মধ্যে পাঁচ জন বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় আট সদস্য নিয়ে পঞ্চায়েত কর্তৃত্ব বিজেপির হাতে। যদিও ঘটনার দু’দিন পরে জেলা তৃণমূলের সভাপতির অনুব্রত মণ্ডলের একটি দাবিকে ঘিরে ধন্দ তৈরি হয়ে। অনুব্রত দাবি ছিল, দলবদল করা পঞ্চায়েত সদস্যদের কয়েক জন ফিরে এসেছেন। বিজেপি অবশ্য সেটা মানেনি।

এখনই বিশেষ বিপদ না দেখলেও ইঙ্গিত ভাল নয়, সেটা মেনে নিয়েছেন তৃণমূলের কিছু নেতা। গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৬৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতের দখল নিয়েছিল তৃণমূল। বিজেপি পেয়েছিল মাত্র দুটি। ৩-৩ আসনে টাই হয়ে থাকা মহম্মদবাজারের রামপুর গ্রাম পঞ্চায়েত দিন তিনেক আগে লটারিতে দখল করেছে শাসকদল। আগামী দিনে এই হিসেব কী দাঁড়ায় সেটাই দেখার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement