প্রতীকী ছবি।
কেউ ছেড়েছেন পদ। কেউ দলই ছাড়বেন বলে ঘোষণা করেছেন। মঙ্গলবার দুবরাজপুরের একাধিক দলীয় নেতার এমন পদক্ষেপ বীরভূম জেলা বিজেপি-র ‘ভাঙন’ আরও চওড়া করল বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। দলের নিচুতলার কর্মীদের বড় অংশই বলছেন, জেলায় সংগঠন তলানিতে ঠেকেছে। সমন্বয়ের অভাব দেখা দিয়েছে। পরের পর নেতা-কর্মী তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। অনেক নেতা হোয়্যাটসঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেসুরে হচ্ছেন। এখনও যাঁরা শিবির বদল করেননি, তাঁরাও নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছেন।
সামনেই জেলার পাঁচটি পুরসভায় নির্বাচন। যে পুরসভাগুলিতে গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে শাসকদলের থেকে এগিয়েছিল বিজেপি, সেখানে এই রক্ষক্ষরণ সামলে কী ভাবে ঘুরে দাঁড়াবে দল— প্রশ্ন ঘুরছে দলের অন্দরেই। সোমবার রাতে, বীরভূমে দলের ‘শক্তিক্ষয়’ এবং তৃণমূল ছেড়ে দলে আসা নেতাদের প্রসঙ্গে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন বিজেপি নেতা তথা বোলপুরের প্রাক্তন সাসংদ অনুপম হাজরা। তিনি লিখেছেন, ‘বাড়িতে অতিথি এলে, অনেক সময় বাড়ির লোকেদের অবজ্ঞা করে অতিথিদের একটু বেশি আদর যত্ন করি। বিজেপিতে আসা ক্ষণস্থায়ী নেতাদের ক্ষেত্রেও তাই করেছি। বীরভূমও তার ব্যতিক্রম নয়!!!’ অনুপমের মতে, এখন অতিথি বিদায়ের পর বাড়ির লোকেদের নিয়ে বাড়ি বাঁচানোর লড়াই করতে হবে।
কিন্তু, এর পরে আবার খোঁচা দিয়েছেন অনুপম। লিখেছেন, ‘বাড়ি বাঁচানোর লড়াই শুরু করা যেতেই পারে। কিন্তু, বাড়ির কর্তাদের ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে!’
এই ঐক্যবদ্ধ চেহারাটাই দলের আর নেই, বরং ছন্নছাড়া ভাবই বেশি—আক্ষেপ বীরভূমের নিচুতলার বিজেপি কর্মীদের। সদ্যই বীরভূমকে ভেঙে বোলপুর ও বীরভূম, দুই সাংগঠনিক জেলা করেছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা অবশ্য বলেন, ‘‘দল একটা গঠনতন্ত্র মেনে চলে। সেটা মানতে হবে। আজীবন পদ আগলে কেউ থাকতে পারেন না। কারও যদি পদের মায়া থাকে তিনি সরে যাবেন।’’
সভাপতি এ কথা বলেলও বিজেপি পুরনো কয়েক জন কর্মকর্তার কথায়, যাঁরা বিজেপি ক্ষমতায় আসবে ভেবে তৃণমূল থেকে এসেছিলেন, মোহভঙ্গের পরে তাঁরা তৃণমূলে ফিরেছেন এটা মানা যায়। কিন্তু, যাঁরা দীর্ঘদিনের কর্মী ও পদাধিকারী (সেই তালিকায় দলের সাধারণ সম্পাদকেরাও রয়েছেন) তাঁরা কেন বিদায় নিচ্ছেন বা বসে যাচ্ছেন, তার মূল্যায়ন প্রয়োজন। জেলার এক বিজেপি নেতা বলছেন, ‘‘ভুল তো কোথাও হয়েইছে। তা না হলে কেন সকলেই দল ছাড়তে উদ্যত হবে।’’
জেলার একমাত্র বিধানসভা দুবরাজপুর, যেখানে বিজেপি বিধায়ক পেয়েছে। সেখানেও সমান ক্ষোভ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবারই একযোগে নেতাদের কয়েক জন দল ও পদ ছেড়ে তৃণমূলের দিকে পা বাড়িয়েছেন। দুবরাজপুর বিধানসভা এলাকার এক বিজেপি কার্যকর্তা, যিনি জেলার দায়িত্বে ছিলেন, তিনি সরাসরি তোপ দেগেছেন দলের বিধায়ক অনুপ সাহার বিরুদ্ধে। ওই নেতার অভিযোগ, ‘‘নেতৃত্বের ভুল, বিশেষত স্থানীয় বিধায়কের আচরণে অতিষ্ঠ হয়েই অনেকে এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, নেবেন।’’ বিধায়ক যদিও বলেন, ‘‘সমন্বয়ের কোনও অভাব নেই। আচরণও সমস্যা নয়। তবে, দলের পদে যিনি আছেন, কাজ তাঁকেও করতে হবে। তিনি তো দলের বাইরে নন।’’ তাঁর দাবি, দলের কর্মীরা দলের সঙ্গেই আছেন। পুরভোটেই সেটা প্রমাণিত হবে।