সেই গার্ডওয়াল। নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার উদ্যোগে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের দু’টি পুকুরের পাড়ে গার্ডওয়াল তৈরি করা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরে শুরু হয়েছে বির্তক।
সূত্রের খবর, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের প্রায় ১০ লক্ষ টাকায় ৮ নম্বর ওয়ার্ডের দু’টি পুকুরে গার্ডওয়াল তৈরির কাজ করছে পুরসভা। কিন্তু শাসক দলের একাংশের দাবি, শহরের বেহাল হয়ে পড়া রাস্তা সংস্কার ও পানীয় জলের সমস্যা মেটানোর কাজে আগে নজর দেওয়া দরকার পুরসভার।
রঘুনাথপুর শহরে তৃণমূলের সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতার দাবি, ‘‘রঘুনাথপুর শহরের অনেক রাস্তা দীর্ঘ সময় ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে। তা ছাড়া, শহরে জলের সমস্যাও আছে। ফলে, নাগরিক পরিষেবা নিশ্চিত করতে যেখানে পুরসভার রাস্তা সংস্কার ও জলের সমস্যা মেটানো উচিত ছিল, সেখানে অপ্রয়োজনীয় ভাবে পুকুরের গার্ডওয়াল তৈরি করে অর্থের অপচয় করছেন পুর-প্রশাসক।’’
যদিও রঘুনাথপুর পুরসভার তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান পুরপ্রশাসক মদন বরাটের পাল্টা দাবি, ‘‘বর্ষার সময়ে পুকুরের জল রাস্তায় এসে পড়লে রাস্তার আরও ক্ষতি হবে। তাই গার্ডওয়াল তৈরির প্রয়োজনীয়তা বুঝেই সেই কাজ করানো হচ্ছে।’’ এই দাবি ও পাল্টা দাবিকে ঘিরেই শহর তৃণমূলের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
দলের দু’তরফের নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটাতে উদ্যোগী হয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। তৃণমূলের পুরুলিয়া জেলা সভাপতি গুরুপদ টুডু বলেন, ‘‘রঘুনাথপুর পুরসভার কাজ নিয়ে দলের মধ্যে মতানৈক্য তৈরির হওয়ার খবর পেয়েই শহর তৃণমূল সভাপতি বিষ্ণুবাবু ও পুর-প্রশাসক মদনবাবুকে দলীয় কার্যালয়ে ডাকা হচ্ছে।”
গত লোকসভা ভোটের নিরিখে রঘুনাথপুর শহরের ১৩টি ওয়ার্ডেই বিজেপির থেকে পিছিয়ে পড়েছিল তৃণমূল। বিধানসভা ভোটে অবশ্য রাজ্যের শাসক দল এই শহরে সামান্য কিছু উন্নতি করে। দু’টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল। বাকি ওয়ার্ডগুলিতে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও, তৃণমূলের সঙ্গে ব্যবধান কমে এসেছে।
ফলাফল পর্যালোচনা করে তৃণমূল নেতৃত্বের একটি বড় অংশ দাবি করেছিলেন, রঘুনাথপুর শহরের বিভিন্ন এলাকার বেহাল রাস্তা ও পানীয় জলের সমস্যা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে ইভিএমে। ওই অংশের নেতৃত্বের দাবি ছিল, মানুষজনের দাবি ও ক্ষোভের কথা ভেবে রাস্তাঘাটের সংস্কার ও জলের সমস্যা সমাধানই পুরসভার অগ্রাধিকার হোক। কিন্তু তার পরিবর্তে পুরসভা দু’টি পুকুরে চারটি গার্ডওয়াল তৈরি করতে শুরু করায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ।
জেলা রাজনীতির ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে হয়তো এ বার পুরসভার নির্বাচন হতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে ঘর গোছাতে শুরু করতে চাইছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের একাংশের মতে, পুরভোটে সাফল্য পেতে হলে, শহরের বাসিন্দাদের ক্ষোভ প্রশমন করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট সংস্কার ও জলের সমস্যা মেটানো দরকার বলেই মনে করছেন শাসকদলের নেতাদের একাংশ। শহর তৃণমূল সভাপতি বিষ্ণুচরণ মেহেতা বলছেন, ‘‘দলের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে মানুষজনের সমস্যার কথা না ভেবে নিজের মর্জিমতো কাজ করছেন পুর-প্রশাসক। বিষয়টি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছি।”
যদিও পুর-প্রশাসক মদনবাবুর দাবি, ‘‘রাস্তাঘাটের সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই আমি উদ্যোগী হয়েছি। পুরসভার নিজস্ব তহবিল থেকে ১ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে রাস্তাগুলির আমূল সংস্কার করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে সেই কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল। কিন্তু সেখানে একটি সংস্থা দরপত্র জমা দেয়। ফলে, নিয়ম অনুযায়ী, সে প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। ফের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”