বন্ধ শৌচালয়, বিপাকে পর্যটকেরা

বিষ্ণুপুরের অন্যতম আকর্ষণ রাসমঞ্চ। শহর ঘুরে দেখতে এসে কেউ রাসমঞ্চ না দেখে ফিরে যাবেন, কার্যত ভাবা যায় না।

Advertisement

অভিজিৎ অধিকারী 

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ০০:১৫
Share:

রাজ দরবার এলাকায় একই অবস্থা। নিজস্ব চিত্র

টেরাকোটার সৌন্দর্য আর মাকড়া পাথরের কারুকার্যের জন্য বিষ্ণুপুরের খ্যাতি জগৎজোড়া। বছরভর এখানে পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। পর্যটন শিল্পের প্রসারে নেওয়া হচ্ছে নানা ব্যবস্থাও। কিন্তু দর্শনীয় জায়গাগুলির কাছেপিঠে পর্যটকদের জন্য তৈরি করা শৌচাগারগুলি তালা বন্ধ অবস্থাতেই পড়ে রয়েছে। কেন খোলা হচ্ছে না, তা নিয়ে পর্যটন মরসুমে শুরু হয়েছে চাপানউতোর।

Advertisement

বিষ্ণুপুরের অন্যতম আকর্ষণ রাসমঞ্চ। শহর ঘুরে দেখতে এসে কেউ রাসমঞ্চ না দেখে ফিরে যাবেন, কার্যত ভাবা যায় না। কিন্তু এই রাসমঞ্চের আশপাশে শৌচাগার দেখতে পাওয়া যায় না। কিছু দূরে কলেজ রোডের পাশে একটি শৌচালয় রয়েছে। তবে তা মাঝেমধ্যে বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ। দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি জানান, আয় ভাল নয়। কত দিন ওই শোচাগারটি খোলা রাখা যাবে, বলা যাচ্ছে না।

রাজ দরবার এলাকায় বিধায়কের এলাকা উন্নয়ন তহবিল থেকে সাড়ে ১১ লক্ষ টাকা খরচ করে বছরখানেক আগে শৌচাগার ও সাব-মার্সিবল পাম্প বসানো হয়েছিল। সেটিও তালাবন্দি। দলমাদল কামান ও লাগোয়া ছিন্নমস্তা মন্দিরেও পর্যটকেরা আসেন। কাছেই পোড়ামাটির হাট সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় বেশ কয়েক মাস আগে সাতটি বায়ো-টয়লেট বসানোর ব্যবস্থা করেন মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর)। তার মধ্যে কয়েকটি নোংরা, কয়েকটি তালাবন্ধ। তার পাশেই রয়েছে সাংসদের এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় কেনা ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার। সেখানে না আছে জল, না আছে পরিচ্ছন্নতা। স্থানীয়েরা জানান, ব্যবহার করা দূরে থাক, দুর্গন্ধে ধারেপাশে যাওয়া যায় না।

Advertisement

লালগড় প্রকৃতি উদ্যানেও বহু মানুষ ঘুরতে যান। বিষ্ণুপুর ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে এবং বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের তহবিল থেকে সেখানেও নির্মিত হয়েছে আধুনিক মানের সুলভ শৌচালয়। আপাতত সেটিও তালাবন্ধ। শাঁখারিবাজার মদনমোহন মন্দিরের সামনে একটি শৌচাগার জীর্ণ হয়ে পড়েছিল। স্থানীয় কাউন্সিলর শ্রীকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সেটির সংস্কার করা হলেও দরজা না থাকায় ব্যবহার করতে পারছেন না পর্যটকেরা। দরজা লাগানোর আশ্বাস দিয়েছেন কাউন্সিলর।

বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন মেদিনীপুরের বেলদার স্নেহা নাগ, বর্ধমানের তপন সাহা, বীরভূমের রামপুরহাটের বিশ্বজিৎ রায়েরা। অনেকের মতো তাঁরাও ঘুরতে ঘুরতে শৌচাগারেরও খোঁজ করেছিলেন। কিন্তু শৌচাগার দেখতে পেলেও তালা দেখে অনেকে চটে যান।

স্নেহাদেবীর ক্ষোভ, ‘‘বিষ্ণুপুর যে প্রাচীন শহর, তা দেখলেই বোঝা যায়। তবে স্বচ্ছতার দিক থেকে অনেক পিছিয়ে। পর্যটকদের কথা ভেবে অন্তত শৌচালয় ও পানীয় জলের সুব্যবস্থা রাখা দরকার ছিল। যেখানেই যাচ্ছি, দেখছি শৌচালয় তালা বন্ধ। বনেবাদাড়ে তো যাওয়া যায় না!”

আর এক পর্যটক সৌমেন ভট্টাচার্যের দাবি, “রক্ষণাবেক্ষণ যদি না সম্ভব হয়, তবে সরকারি টাকা নষ্ট করে এ সব করার কোনও মানে হয় না। সমস্ত শৌচালয় তালা বন্ধ আর প্রশাসনের কাছে খবর নেই, তা কি হতে পারে?”

কেন বন্ধ? মহকুমাশাসক (বিষ্ণুপুর) মানস মণ্ডল বলেন, “ছিন্নমস্তা চত্বরে যেখানে বায়ো-টয়লেট রাখা আছে, সেই এলাকায় মাটি ফেলে উঁচু করা হবে। সেখানকার সব ক’টি শৌচালয় ব্যবহারের উপযোগী করে দেওয়া হবে।’’

বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তুষারকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “আমি বিধায়কের এলাকা উন্নয়নের তহবিলের টাকায় দু’টি শৌচালয় নির্মাণ করেছিলাম। ব্লক প্রশাসনই রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পায়। সেগুলি চলছে কি না ব্লক প্রশাসনই বলতে পারবে।’’

আর বিডিও (বিষ্ণুপুর) স্নেহাশিস দত্ত বলছেন, ‘‘লালগড় প্রকৃতি উদ্যান ও রাজ দরবার চত্বরের শৌচাগারগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, খোঁজ নেব।’’

যদিও বাসিন্দাদের প্রশ্ন, পুজো থেকেই এখানে পর্যটনের ভরা মরসুম শুরু হয়েছে। আনাগোনাও বেড়েছে পর্যটকদের। তাহলে পর্যটকদের ন্যূনতম পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রশাসনের এই গড়িমসি কেন?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement