শতাব্দী প্রাচীন লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। নিজস্ব চিত্র।
মুকুটমণিপুর জলাধারের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে শতাব্দী প্রাচীন লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির। তবে এই মন্দিরের এক বিশেষত্ব রয়েছে। মাত্র তিন মাস জলের উপরে থাকে এই মন্দির। বাকি ৯ মাস ডুবে থাকে মুকুটমণিপুর জলাধারের নীচে। বর্ষাকালে বৃষ্টিতে কাঁসাই ও কুমারী নদী দিয়ে জল ঢুকতে শুরু করে মুকুটমণিপুর জলাধারে। দ্রুত বাড়তে থাকে জলাধারের জলস্তর। আর তাতেই ডুবে যায় এই জলাধারের এক প্রান্তে থাকা এই মন্দির। গ্রীষ্মকালে জলস্তর নামলে ওই মন্দির আবার জেগে ওঠে।
স্থানীয়দের মতে, মুকুটমণিপুর জলাধার তৈরির আগে এই জায়গায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭৩টি গ্রাম ছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল বড্ডি গ্রাম। বড্ডি গ্রামের জমিদার সুবুদ্ধি পরিবারের উদ্যোগে এখন থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে চুন-সুরকির তৈরি সুদৃশ্য এই লক্ষ্মী-জনার্দন মন্দির তৈরি হয়। পরবর্তীতে মুকুটমণিপুর জলাধারের খননকাজ শুরু হলে সুবুদ্ধি পরিবার-সহ গ্রামের বাকিদের উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের সময় সুবুদ্ধি পরিবার মন্দির থেকে বিগ্রহ নিয়ে চলে যায়। জলাধার তৈরির সময় গ্রামের সমস্ত ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হলেও কোনও অজানা কারণে অক্ষত থেকে যায় এই মন্দির। এর পর জলাধার তৈরির পর থেকে বছরের ন’মাস জলের নীচেই থাকে এই মন্দির।
প্রতি বছর শীতের মরসুমে বিভিন্ন জায়গা থেকে অসংখ্য পর্যটক ছুটে আসেন মুকুটমণিপুরে। এখানে বেড়াতে এসে ঘুরে আসেন অদূরে থাকা পরেশনাথ পাহাড়, মুসাফিরানা ভিউ পয়েন্ট ও ডিয়ার পার্কও। তবে প্রচারের অভাবে পর্যটকদের অনেকেরই লক্ষ্মী-জনার্দনের মন্দির অদেখা থেকে যায় বলেও স্থানীয়দের দাবি। স্থানীয় রুদড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রসূননারায়ণ দেব বলেন, ‘‘আমরা ছোট থেকেই এই মন্দির দেখে আসছি। বছরের ৯ মাস মন্দিরটি জলের তলায় থাকলেও মন্দিরের কাঠামোতে তেমন ক্ষতি হয়নি। এই মন্দিরটি প্রচারের আলোয় এলে পর্যটকরাও এই মন্দির দেখার সুযোগ পাবেন।’’
স্থানীয় গৌরাঙ্গ মাঝির দাবি, ‘‘পর্যটকেরা তো দূরঅস্ত্, স্থানীয়দেরও অনেকে এই মন্দিরের ইতিহাস জানেন না। পর্যটকদের কাছে এই মন্দিরের ঐতিহ্য তুলে ধরলে মুকুটমণিপুরের পর্যটন আরও সমৃদ্ধ হবে।’’
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।