মাত্র ১৯ বছর বয়সে বিয়ে। তবে সেই বিয়ে মধুর পরিণতি পায়নি। কিছু বছরের মধ্যেই ভেঙে যায় বিয়ে। বেশি পড়াশোনা না করার কারণে ভাল চাকরি পাওয়ারও সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর পরও থেমে থাকেননি। ইচ্ছে ছিল নতুন করে জীবন শুরু করবেন। সমাজের বুকে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করবেন। এখন তাঁকে প্রায় সারা দেশ চেনে। তিনি ভারতের অন্যতম পোল ডান্সার রশ্মি জাঠান।
১৯ বছর বয়সে নৌবাহিনীর এক অফিসারের সঙ্গে বিয়ে হয় রশ্মির। স্বামী তাঁর থেকে ১০ বছরের বড় ছিলেন। সব ভালই চলছিল। তবে বিয়ের দু’মাসের মধ্যেই পথদুর্ঘটনার কবলে পড়েন রশ্মির স্বামী। নৌবাহিনীর চাকরিও খোয়াতে হয়।
চাকরি হারানোর দুঃখে প্রচুর পরিমাণে মদ থেতে শুরু করেন রশ্মির স্বামী। ধীরে ধীরে তিনি সুরাসক্ত হয়ে পড়েন।
তবে এর পরও হাল ছাড়েননি রশ্মি। স্বামীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই শুরু করেন। পণ করেন যে কোনও ভাবে স্বামীর মদের নেশা ছাড়াবেন।
তবে অনেক চেষ্টা করেও তিনি স্বামীর মদের নেশা ছাড়াতে সক্ষম হননি। অবশেষে হাল ছেড়ে দেন। ঠিক করেন আবার নতুন করে জীবন শুরু করবেন। স্বনির্ভর হবেন। স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে বেরিয়ে আসেন।
তবে বেশি পুঁথিগত শিক্ষা না থাকার কারণে চাকরি পাননি রশ্মি। এর পরই আত্মবিশ্বাস হারাতে শুরু করেন।
উচ্চতা বেশি না হওয়ার কারণে এবং ভাল ভাবে ইংরেজি না বলতে পারার কারণে কম বয়স থেকেই রশ্মি হীনমন্যতায় ভুগতেন। তবে চাকরি না পাওয়ায় আরও বেশি করে মনে করতে শুরু করেন যে, এই সব কারণেই হয়তো তিনি জীবনে উন্নতি করতে পারছেন না।
হতাশা কাটাতে নাচ শিখতে শুরু করেন। বিশেষ করে আকৃষ্ট হন পোল ডান্সের প্রতি। পোল ডান্সার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে প্রশিক্ষণ শুরু করেন।
একটি খুঁটি ধরে নৃত্যকৌশল বা পোল ডান্স করার জন্য শরীরের গঠন এবং ফিটনেসের উপর বিশেষ নজর দিতে হয়। আর সেই কারণেই জোরকদমে শরীরচর্চাও শুরু করেন রশ্মি।
৩৯ বছর বয়সে পোল ডান্সার হিসেবে সাফল্য পান। পোল ডান্সার হিসেবে যথেষ্ট নাম-ডাকও হয়।
দেশ-বিদেশে একাধিক জায়গায় তাঁর শিল্পকলার জন্য রশ্মি স্বীকৃতিও পেয়েছেন। যাঁরা সমস্ত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে নতুন করে জীবন শুরু করতে চান, তাঁদের কাছে অনুপ্রেরণাও হয়ে উঠেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রথমে শখে পোল ডান্স শিখতে শুরু করলেও পরে এই বিশেষ নৃত্যকলার প্রতি আগ্রহ এবং ভালবাসা বাড়ে। পরে আরও বিভিন্ন ধরনের নাচ শেখেন রশ্মি।
পোল ডান্সের জন্য রশ্মি ২০১৬ সালে ৮টি ক্লাস, ২০১৭ সালে ১৬টি ক্লাস এবং ২০১৮ সালে ১০টি ক্লাস নেন। এর পর কাঁধে চোট পাওয়ার কারণে বেশ কিছু দিন প্রশিক্ষণ বন্ধ থাকার পর ২০২০ সালে তিনি আবার নতুন করে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন।
বর্তমানে রশ্মি তাঁর বর্তমান জীবনসঙ্গী রবির সঙ্গে নাচের ভিডিয়ো বিভিন্ন নেটমাধ্যমে পোস্ট করেন। রবিও এক জন নৃত্যশিল্পী। বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী টেরেন্স লুইসের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একে অপরের সঙ্গে পরিচয় হয়।
রশ্মি জানান, তিনি নেটমাধ্যমে বিশেষ সক্রিয় ছিলেন না। তবে রবিই তাঁকে জোর করে নাচের ভিডিয়ো নেটমাধ্যমে দিতে বলেন। এর পরই তাঁর নাচের ভিডিয়োগুলি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়। জনপ্রিয়তা লাভ করেন রশ্মিও।
জীবনে একাধিক বাধা পেরিয়ে সাফল্য লাভ করা রশ্মির অন্য মহিলাদের প্রতি উপদেশ— জীবনে নিজের উপর বিশ্বাস হারিও না এবং জীবন নতুন করে কিছু শুরু করতে ভয় পেও না।
এ ছাড়াও রশ্মির দাবি, তিনি তাঁর জীবনের ৩০ বছর স্বামী, পরিবার, আত্মীয়-পরিজনদের তুষ্ট করে কাটিয়েছেন। তবে ‘লোকে কী বলবে’— এই ধারণা ছেড়ে বেরিয়ে এসে কোনও মানুষ যদি নিজের জন্য বাঁচা শুরু করেন, তবেই সাফল্য আসবে। যেমন করে সাফল্য এসেছে তাঁর জীবনে।