চয়ন সূত্রধর
অন্য দিনের মতো বিকেলে খেলছিলাম গ্রামের শিব মন্দিরে। পাঁচটা নাগাদ রাজুদা (রাজীব পাল) বলল, ‘চল ছাইপুকুরের পাড় থেকে ঘুরে আসি।’ আমার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু, গাব্দু, সায়নরা বলল ওরা যাবে। মা-বাবা বাড়িতে ছিল না। বললাম, ‘চলো, তা হলে।’ কিন্তু, রাজুদা ঠিক করেছিল ও বোন সাথীকে সঙ্গে নেবে না। কিন্তু, আমরা যাচ্ছি দেখে সাথী কান্না জুড়ে দিল। বাধ্য হয়েই ওকে আমরা সঙ্গে নিলাম।
গ্রামের পাশে ছাইপুকুরের পাড় অনেকটা উঁচু। আমরা সবাই চাপলাম। খুব ভাল লাগে উপর থেকে জল দেখতে। সব ঠিকই ছিল। হঠাৎ রাজুদা জানাল, নীচে নামবে। আমি যেতে মানা করেছিলাম। কিন্তু, ও শুনল না। বলল, ‘যাই না একটু। পা-টা ধুয়ে আসি।’ রাজুদাকে পা ধুতে দেখে নীচে নামল সাথীও। আমরা তিন জন তখনও পাড়ে দাঁড়িয়ে। পা-ধুতে গিয়ে পিছলে জলের মধ্যে পড়ে যায় সাথী। জলে পড়ে বোনকে ছটফট করতে দেখে ঝাঁপিয়ে পড়ল রাজুদা। কিন্তু, ও কোথায় তলিয়ে গেল! সাথী তখনও হাত নাড়াচ্ছে। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। ভাবলাম যাই সাথীর হাতটা ধরে যদি ওকে টেনে তুলতে পারি। কিন্তু, জলের নীচে ঢালটা ভীষণ পিছল। আমিও জলে পড়ে গেলাম। ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। দমবন্ধ হয়ে আসছিল। খাবি খাচ্ছিলাম। জ্ঞান প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম।
তখনই বাবা আমাকে টেনে তুলল। আবছা মনে আছে, তখনও জলের মধ্যে উপুড় হয়ে সাথী। ও কিন্তু নড়ছিল না। রাতে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়িতে আসি। বাবা-মা বলেছে, ‘ও দিকে একেবারে যাবি না।’ খুব মনখারাপ। ভয়ও করছে আমার।
পঞ্চম শ্রেণি, বিকেটিপিপি প্রবীর সেনগুপ্ত বিদ্যালয়