রঘুনাথপুরে ‘এনআরসি’

অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টি পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্য দফতর পুরুলিয়ায় ন’টি এনআরসি তৈরি হয়েছে। পুরুলিয়া সদর ছাড়া বাকি আটটি কেন্দ্র রয়েছে মূলত জঙ্গলমহল এলাকায়।

Advertisement

শুভ্রপ্রকাশ মণ্ডল

রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:২১
Share:

অপেক্ষা। নিজস্ব চিত্র

চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের জন্য রঘুনাথপুরের পাড়া ব্লকে ‘পুষ্টি পুনরুদ্ধার কেন্দ্র’ বা ‘নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার (এনআরসি) গড়তে উদ্যোগী হয়েছে স্বাস্থ্য দফতর ও মহকুমা প্রশাসন। সূত্রের খবর, পরিকল্পনামাফিক কাজ চললে পুজোর আগে বা তার ঠিক পরেই চালু হয়ে যাবে ওই কেন্দ্র।

Advertisement

অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের পুষ্টি পুনরুদ্ধারে স্বাস্থ্য দফতর পুরুলিয়ায় ন’টি এনআরসি তৈরি হয়েছে। পুরুলিয়া সদর ছাড়া বাকি আটটি কেন্দ্র রয়েছে মূলত জঙ্গলমহল এলাকায়। পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে ওই কেন্দ্রের আওতায় রয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমার ছ’টি ব্লক-সহ জেলার মোট ১০টি ব্লক।

রঘুনাথপুর মহকুমার আসানসোল ঘেঁষা নিতুড়িয়া থেকে পুরুলিয়া সদরের দূরত্ব কমবেশি ৭৫ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নিয়ে পুরুলিয়া সদরে আসতে অসুবিধায় পড়েন পরিজনেরা। বিষয়টি নজরে আসার পরে রঘুনাথপুরে একটি কেন্দ্র খুলতে উদ্যোগী হন মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) আকাঙ্ক্ষা ভাস্কর। প্রথমে ঠিক হয়, বন্ধ হয়ে যাওয়া রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালের ভবনেই কেন্দ্রটি খোলা হবে। পরে কেন্দ্রটি পাড়া ব্লক সদরে তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। পাড়া ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে থাকা স্বাস্থ্য দফতরের একটি ভবনে তা চালু হবে বলে খবর।

Advertisement

রঘুনাথপুর মহকুমায় চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা জানাতে নারাজ প্রশাসন। তবে তা খুব কম নয় বলেই জানাচ্ছেন এক আধিকারিক। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘গড় হিসেবে মহকুমার ছ’টি ব্লকে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ৩৬।’’ মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘চরম অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা বলা সম্ভব নয়। দেখা গিয়েছে, অপুষ্টিতে ভোগা মোট শিশুদের ১ শতাংশ চরম অপুষ্টির শিকার।’’

রঘুনাথপুর মহকুমার বড় অংশ শহরাঞ্চল। মহকুমাশাসক জানান, শহরাঞ্চলের বস্তি এলাকার বহু মহিলা বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতে যান। শিশুদের সব সময়ে ঠিকমতো নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয় শিশুরা। আকাঙ্ক্ষাদেবী বলেন, ‘‘এলাকায় ঘুরে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের দেখার পরেই রঘুনাথপুরে এনআরসি চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলাম। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে আলোচনা করে পাড়ায় কেন্দ্রটি খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত সব কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।” তাঁর সংযোজন, ‘‘পাড়ার ওই কেন্দ্রে জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলাশাসক।’’

এই খবরে খুশি রঘুনাথপুর মহকুমার অন্তর্গত ব্লকগুলির ‘সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্পে’র আধিকারিকেরা। তাঁরা জানান, ওই কেন্দ্রগুলিতে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের নিয়ে কয়েকদিন থাকতে হয় অভিভাবকদের। পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শমতো খাবার দেওয়া হয় শিশুদের। চলে তাদের চিকিৎসা। তার পরেই শিশুদের ছাড়া হয়। কিন্তু রঘুনাথপুর থেকে পুরুলিয়ায় যেতে চান না অনেক শিশুর অভিভাবক। পুরুলিয়া সদরের এনআরসি সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া কেন্দ্রে মূলত পুরুলিয়া ১, পুরুলিয়া ২, হুড়া ও পুঞ্চা ব্লকের শিশুরাই আসে। রঘুনাথপুর থেকে হাতেগোনা কয়েকজন শিশুকে ওই কেন্দ্রে নিয়ে যান তাদের অভিভাবকেরা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, পুরুলিয়া সদরের কেন্দ্রটি আর চালু থাকবে না। ফলে পাড়ার কেন্দ্রের জন্য নতুন করে চিকিৎসক, পুষ্টি বিশারদ বা কর্মী নিয়োগ করতে হবে না। তবে তাতে পুরুলিয়া কেন্দ্রে অপুষ্টিতে ভোগা শিশুদের কোনও অসুবিধা হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement