ওটিতে ঝুলন্ত দেহ, ফুটেজ দেখে শুরু তদন্ত

কী ভাবে চার তলায় ওটিতে স্বামী গেলেন বুঝে উঠতে পারছি না। গলায় ফাঁস দেওয়ার জন্য অতখানি ব্যান্ডেজ কোথা থেকে পেলেন তাও রহস্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৯ ০০:৩০
Share:

মৃত বাপ্পা বাউড়ি।

হাসপাতাল থেকে ‘নিখোঁজ’ থাকা রোগীর ঝুলন্ত দেহ অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থেকে উদ্ধার হওয়ার ঘটনাকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠল বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। সোমবার রাতে হাসপাতালের চার তলার ওটি থেকে বিষ্ণুপুর শহরের কাদাকুলির বাপ্পা বাউরির (৩৭) গলায় ব্যান্ডেজের ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত দেহ পাওয়া যায়। এই ঘটনার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দুষে মঙ্গলবার হাসপাতাল ও বিষ্ণুপুর থানায় বিক্ষোভ দেখান তাঁর পরিজনেরা। থানাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেন মৃতের স্ত্রী মায়া বাউরি। প্রশাসনের তরফে তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

Advertisement

পরিবার সূত্রে খবর, পেটের ব্যথা নিয়ে বুধবার বিকেলে বাপ্পাকে হাসপাতালের পুরুষ সার্জিক্যাল বিভাগে ভর্তি করানো হয়। তাঁর স্ত্রীর দাবি, ‘‘শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত স্বামীকে হাসপাতালের বিছানায় দেখে এসছি। শনিবার সকাল ৯টা নাগাদ হাসপাতালে যাই। দরজা বন্ধ থাকায় অপেক্ষা করতে থাকি। দুপুর ১২টার সময় গেট খুলতে ভিতরে গিয়ে দেখি স্বামী হাসপাতালের বিছানায় নেই। নার্সেরা জানান, ছুটি হয়ে যাওয়ায় স্বামী বাড়ি চলে গিয়েছেন। অথচ বাড়িতে যাননি। পাগলের মতো খোঁজাখুঁজির পরে রবিবার বিকেলে বিষ্ণুপুর থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করি।’’

তাঁর প্রশ্ন, কী ভাবে চার তলায় ওটিতে স্বামী গেলেন বুঝে উঠতে পারছি না। গলায় ফাঁস দেওয়ার জন্য অতখানি ব্যান্ডেজ কোথা থেকে পেলেন তাও রহস্য। হাসপাতালের নিরাপত্তা রক্ষীরাই তাঁকে আটকালেন না কেন? এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কি না তা নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন বাপ্পার পরিজনেরা।

Advertisement

মৃত বাপ্পা বাউড়ির শোকার্ত স্ত্রী। ছবি: শুভ্র মিত্র

হাসপাতালের সুপার সুব্রত রায় বলেন, ‘‘চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে ওঠায় রবিবার বাপ্পাকে ছুটি দেওয়ার কথা ছিল। শনিবার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে চার দিকে তল্লাশি চালানো হয়। রবিবার পুলিশকে ঘটনাটি জানানো হয়।’’

এ দিন সকালে মৃতের পরিবার বিষ্ণুপুর থানায় বিক্ষোভ দেখান। তারপরে হাসপাতাল সুপারের চেম্বারে কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। সুপার না থাকায় তাঁরা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে মৃত্যুর জবাবদিহি চেয়ে ভিড় করেন। বিষ্ণুপুর স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিকের আশ্বাস, “মৃতের পরিবারের অভিযোগ পেয়েছি। সব কিছু তদন্ত করে রিপোর্ট দেওয়া হবে।”

পুলিশের দাবি, ওটির সামনের সিসিক্যামেরার ফুটেজে তাঁরা দেখেছেন, বাপ্পা শনিবার রাত্রি ১২টা ২৪ নাগাদ দরজা ঢেলে ভিতরে ঢোকেন। তার আগে মিনিট দশেক ওটির বাইরে তিনি ঘোরাঘুরি করেন। পুলিশ জানিয়েছে, সমস্ত ফুটেজ তারা সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করছে।

তবে মৃতের পরিবারের সঙ্গে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য তথা বিষ্ণুপুর পুরসভার কাউন্সিলর দিব্যেন্দু বন্ধ্যোপাধ্যায়ও হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেন, ‘‘ওই ওটি-র যদি ব্যবহার না থাকে, তা হলে চাবি দেওয়া হয়নি কেন? সিসিক্যামেরায় একজন রোগীকে ওটির ভিতরে ঢুকতে দেখা গেলেও মনিটরে নজর রাখা হয়নি কেন? এ ক্ষেত্রে হাসপাতাল দায় এড়াতে পারে না।

হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটরে সবসময় নজর রাখার মতো লোকবল নেই। কিছু ঘটলে তারপরে ফুটেজ দেখা হয়। পুলিশ তদন্ত করুক।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement