মৃত পুলিশকর্মী ভবেশচন্দ্র দাসের স্ত্রী অনিমাদেবী। নিজস্ব চিত্র
পরিবারের কারও জীবনের বিনিময়ে ঠেকে শিখে ওঁরা চান করোনার টিকা যেন সবাই নিয়ে নেন। কারও মনে হচ্ছে, আরও একটু আগে টিকা চলে এলে স্বজনদের এ ভাবে হারাতে হত না। আবার কেউ বলছেন, এত দিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছিল, প্রতিষেধকের আশায় সেই ঝুঁকি অনেকটা দূর হবে। জেলায় পুলিশ কর্মী ও সরকারি আধিকারিকদের প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শুরু হতে এমনই আর্জি জানালেন করোনায় মৃত পুলিশকর্মীর পরিবার থেকে শুরু করে করোনা জয়ী পুলিশকর্মীরা।
গত বছরের অক্টোবরে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বোলপুরের ত্রিশূলাপট্টির বাসিন্দা ভবেশচন্দ্র দাস নামে এক পুলিশকর্মীর। তিনি বোলপুর আদালতের জিআরও পদে কর্মরত ছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পরে পরিবার। ভবেশবাবুর স্ত্রী অনিমা দাস বলেন, “ওঁর মৃত্যুর পরে বীরভূম পুলিশ নানা ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। রাজ্য সরকারও ছেলেকে পুলিশে চাকরি দিয়েছে। আমি চাই না আর কারও পরিবারের সঙ্গে এমন হোক। তাই প্রত্যেক পুলিশকর্মীকে অনুরোধ, তাঁরা যেন করোনা থেকে বাঁচতে এই প্রতিষেধক নেন।” একই কথা শোনা গিয়েছে প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা হিসেবে কাজ করা করোনা জয়ী পুলিশকর্মীদের মুখেও। তাঁরা জানাচ্ছেন, গত বছরের মার্চ মাস থেকে একেবারে সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন। তাতে অনেকে আক্রান্তও হয়েছেন। তার মধ্যেও কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিষেধক চলে আসায় কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, জেলায় মোট ১০০ জনের উপরে পুলিশ কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এক জন ছাড়া সকলেই করোনা জয় করে ঘরে ফিরেছেন। স্বাস্থ্যকর্মীদের পরে এ বার জেলার পুলিশ এবং সরকারি কর্মী, আধিকারিকদেরও টিকাকরণের কাজ শুরু হয়েছে মঙ্গলবার থেকে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি স্বাস্থ্য জেলায় প্রতিদিন ১০০ জন করে সরকারি কর্মী ও পুলিশকর্মীকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে মঙ্গলবার টিকাকরণ শুরু হয়। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অনেকটাই হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। জেলা পুলিশ সুপার মিরাজ খালিদ জানিয়েছেন, প্রতিদিনের যে তালিকা রয়েছে, সেই তালিকা অনুযায়ী পুলিশ কর্মীরাও প্রতিষেধক নেবেন। পুলিশ কর্মীরাও এ বার টিকা নিতে এগিয়ে আসায় বাকিদের ভীতি কাটবে বলে আশায় স্বাস্থ্যকর্তারা।