বাড়ির চারপাশে জন্মানো আগাছা পরিষ্কার করছেন আদিবাসী পরিবারের সদস্যেরা। বুধবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
ডাইন অপবাদে প্রায় সাড়ে তিন বছর ঘরছাড়া থাকার পরে অবশেষে প্রশাসনের উদ্যোগে বোলপুরের সিয়ান মুলুক পঞ্চায়েতের মণিকুণ্ডডাঙা গ্রামে ফিরল আদিবাসী পরিবার। ওই পরিবারের যাতে কোনও অসুবিধা না-হয়, তার জন্য প্রশাসনের তরফে গ্রামে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হয়েছে।পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টিও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। যদিও এখনও আতঙ্ক কাটেনি পরিবারটির।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর তিনেক আগে মণিকুণ্ডডাঙা গ্রামে হঠাৎ করে বেশ কিছু মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গ্রামের মোড়লের দু’টি ছাগল ও এক যুবকের চারটি হাঁস মারা যায়। ওই পরিবারের অভিযোগ, মোড়ল সালিশি সভা বসিয়ে ওই আদিবাসী পরিবারের সদস্যদের গ্রামছাড়া করা নিদান দেন। এর পরেই গ্রামবাসীদের একাংশ ওই পরিবারের উপরে চড়াও হয়ে তাঁদের ডাইন অপবাদ দিয়ে মারধর করে শিশু-সহ ১৪ সদস্যকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেন বলে অভিযোগ।
সেই থেকে পরিবারটি কখনও আত্মীয় বাড়িতে, কখনও খোলা আকাশের নীচে, কখনও বা প্রতীক্ষালয়ে দিন কাটিয়েছে।
গত এপ্রিলে গ্রামে ফিরতে চেয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে ধর্নায় বসেন ওই পরিবারের সদস্য এবং তফসিলি জাতি-জনজাতি অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সদস্যেরা। এর পরেই বোলপুরের জামবুনি বাস স্ট্যান্ড সংলগ্ন পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের কমিউনিটি হলে ওই পরিবারের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
দিন কয়েক আগে পরিবারটিকে গ্রামে ফেরানোর লক্ষ্যে প্রশাসনের বৈঠক হয়। বুধবার মহকুমাশাসক (বোলপুর) অয়ন নাথ, এসডিপিও নিখিল আগরওয়াল এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ওই পরিবারটিকে গ্রামে ফেরানো হয়। দীর্ঘদিন ভিটেয় না-থাকায় বাড়ির চারপাশে আগাছা জন্মেছে। বসতবাড়িও ভগ্নপ্রায় অবস্থায় পরিণত হয়েছে। গ্রামে ফিরেই এ দিন নিজেদের ঘর পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়েন পরিবারের সদস্যেরা। প্রশাসনের তরফে আপাতত কয়েক দিন তাঁদের জন্য খাবার ও জলের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
পরিবারের এক মহিলা সদস্য বলেন, “এত বছর পরে বাড়ি ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। তবে দুশ্চিন্তাও রয়েছে। গ্রামে আবারও সবাই আগের মতো আমাদের সঙ্গে কথা বলবে কি না, গ্রামের পুকুরের জল ও পানীয় জল নিতে দেবে কি না, চিন্তায় আছি।” মহকুমাশাসক বলেন, “যে অন্ধবিশ্বাসের ভিত্তিতে ওই পরিবারকে গ্রামছাড়া করা হয়েছিল, তা সকলের সঙ্গে বসে আজ আমরা মেটাতে পেরেছি। ওই পরিবারটিকে গ্রামে ফেরানোর পাশাপাশি আরও একটি পরিবারকে এ দিন গ্রামে ফেরানো হয়। ওই পরিবারটিও কুসংস্কারের বশে ঘরছাড়া ছিলেন।”
তফসিলি জাতি-জনজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু যৌথ মঞ্চের সভাপতি বৈদ্যনাথ সাহা বলেন, “পরিবারটি গ্রামে ফিরতে পারায় আমরা খুশি। তবে, ওঁদের উপরে আর যেন অত্যাচার না-হয়, সে বিষয়ে প্রশাসনকে আরও সজাগ থাকার অনুরোধ করব।”