রাস্তায় বসছে বাজার।
এমনিতেই সঙ্কীর্ণ রাস্তা। তার উপরে সেই রাস্তার দু’পাশে সার দিয়ে আনাজ সাজিয়ে বসেন বিক্রেতারা। ক্রেতাদের ভিড় বাড়লে রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বাজার উঠে গেলে চারপাশে ছড়িয়ে থাকে আবর্জনা। এমনই অবস্থা পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর শহরের আনাজ বাজারের। টানা পনেরো বছর ক্ষমতায় থেকেও তৃণমূল পরিচালিত পুরকর্তৃপক্ষ কেন একটি ঠিকঠাক বাজার চালু করতে পারল না, পুরভোটের মুখে সে অভিযোগে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। তৃণমূলের প্রাক্তন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায় ও বর্তমান পুরপ্রধান মদন বরাট দু’জনেরই অবশ্য দাবি, ‘‘হাটতলা রাস্তা থেকে আনাজ বিক্রেতারা সরতে নারাজ। তাই সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না।’’
এই সমস্যার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে রাস্তা বেদখলের অভিযোগও। বাজার না সরায় হাটতলার রাস্তা সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে বলে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়ছেন বাসিন্দারা। তেমনই নতুন বাজারেও রাস্তার একাংশ হকারদের দখলে চলে গিয়েছে বলে অভিযোগ। পুরবাসীর একাংশের মতে, ওই দুই রাস্তা এতটাই সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়েছে যে ব্যস্ত সময়ে অ্যাম্বুল্যান্স পর্যন্ত ঢুকতে পারে না। ব্যস্ত সময়ে ওই এলাকায় আগুন লাগলে দমকলের ইঞ্জিন ঢুকবে কী ভাবে? তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বছর দু’য়েক আগে আনাজ বাজারের পাশে একটি বাড়িতে মজুত করে রাখা বাজিতে আগুন লাগার ঘটনার কথা। সে বার ওই এলাকায় দমকলের গাড়ি ঢোকাতে কার্যত কালঘাম ছুটেছিল পুলিশের। এই প্রেক্ষিতেই বাসিন্দারা প্রশ্ন তুলছেন, কেন হকারদের সরিয়ে ও আনাজ বাজারকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করে সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে পারছে না পুরসভা?
সূত্রের খবর, পুরসভা সিপিএমের পরিচালনায় থাকার সময়ে এক বার আনাজ বাজার সরানোর কথা ভাবা হয়েছিল। তৎকালীন পুরপ্রধান সিপিএমের ভবানী নাথ ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী একটি স্থানে ‘নেতাজি দৈনিক বাজার’ তৈরি করেছিলেন। সেই বাজারেই হাটতলার আনাজ বিক্রেতাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কয়েকমাস নেতাজি দৈনিক বাজারে বেচাকেনাও চলে। কিন্তু সিপিএমের হাত থেকে তৃণমূল বোর্ড দখল করার পরেই বন্ধ হয়ে যায় ওই বাজার। বিক্রেতারা ফিরে যান হাটতলার রাস্তাতেই।
সে প্রসঙ্গ তুলে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডকে বিঁধছে সিপিএম। দলের রঘুনাথপুর এরিয়া কমিটির সদস্য লোকনাথ হালদারের অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে আনাজ বাজার তৈরি করেছিলাম আমরা। পুলিশ, প্রশাসনের সাহায্যে বিক্রেতাদের হাটতলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল নেতাজি দৈনিক বাজারে। কিন্তু তৃণমূলের গাফিলতিতেই পুরনো সমস্যা ফিরে এসেছে। ভোগান্তিতে পড়েছেন বাসিন্দারা।” বিজেপির জেলা সম্পাদক বাণেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, তৃণমূল নেতাদের সদিচ্ছা নেই বলেই আনাজ বাজারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। তাঁর প্রস্তাব, ‘‘নেতাজি দৈনিক বাজারে বিক্রেতারা যেতে চাইছেন না। তা হলে হাটতলা এলাকাতেই বিকল্প জায়গা থাকলেও কেন সেখানে আনাজের বাজার তৈরি করে উঠতে পারেনি
তৃণমূলের পুরসভা?”
এ দিকে, হাটতলায় নর্দমার পাশে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাজার করা পছন্দ নয় অনেকেরই। ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা কৌশিক মিশ্র, ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয় মাজি বলেন, ‘‘নর্দমার পাশ থেকে আনাজ আনতে ভাল লাগে না। বাজারের একাংশ জুড়ে জমে থাকে আর্বজনা। পুরসভার ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জায়গা নির্বাচন করে পরিকল্পিত ভাবে বাজার তৈরি করা উচিত।” হাটতলায় আবার সাইকেল, বাইক রাখার ব্যবস্থা নেই। তা নিয়েও ক্রেতাদের ক্ষোভ রয়েছে।
অবস্থানগত কারণে নেতাজি বাজারে ক্রেতা না পেয়ে হাটতলায় ফিরে এলেও স্বস্তিতে নেই বিক্রেতারাও। তাঁদের মধ্যে গৌতম বিদ, সতীশ নন্দীরা দাবি করছেন, ‘‘রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বসতে হয়। পুরসভা অন্তত ছাউনিটুকু নির্মাণ করে দিক।” সে প্রস্তাব উড়িয়ে দিয়ে পুরপ্রধান বলেন, ‘‘আমরা বিক্রেতাদের বারবার নেতাজি দৈনিক বাজারে বসতে বলেছি। কিন্ত তাঁরা কিছুতেই সরতে চাইছেন না।’’ পুরনো হাটতলা এলাকায় আনাজ বাজার তৈরি করার মতো পুরসভার নিজস্ব জায়গা নেই বলেই সেখানে পরিকল্পিত বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি পুরপ্রধানের। উপপুরপ্রধান ভবেশবাবুর আশ্বাস, চেলিয়ামা যাওয়ার রাস্তার পাশে নতুন ৪৮টি দোকান তৈরি করা হচ্ছে। সেখানেই নতুন বাজারে বসা হকারদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। তা হলেই নতুন বাজারের রাস্তা হকার-মুক্ত হয়ে যাবে।