ফাইল চিত্র।
‘দেশটা চলছে গোলেমালে/ দেখছি মা আমরা এই কলি কালে।’ বা ‘আমেরিকান সময় বেলা ১০টা/ ধ্বংস হল পেন্টাগনটা।’—গ্রাম, দেশ থেকে বিদেশের প্রসঙ্গ, ব্যঙ্গের ছলে উঠে আসে সবই।
পুরনো দিনের মতো এখনও বড়জোড়ার মালিয়াড়ায় দুর্গাপুজোয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গিয়েছে সঙের গান। নবমীর রাতে খোল-মৃদঙ্গ নিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরা সঙের দলের গান শুনতে এ বারেও ভিড় জমালেন অসংখ্য মানুষ।
মালিয়াড়ার বাসিন্দা পেশায় শিক্ষক রাজেশ কর্মকার বলছিলেন, “সঙ গানে সমসাময়িক নানা সমস্যা উঠে আসে। উঠে আসে গ্রাম বা দেশের নানা সমস্যার কথা। এমনকি পঞ্চায়েতের কাজের সমালোচনাও তাতে থাকে। তবে সবাই বিষয়টি মজা করে উপভোগ করেন।’’
সঙের গানের দলে থাকেন এক জন ‘রিং মাস্টার’। তিরিশ বছরের বেশি সময় ধরে ‘রিং মাস্টার’ থাকা মালিয়াড়ারই রঘুপতি মণ্ডল বলেন, “ছ’মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়। গানের জন্য ছড়া বাঁধা হয়। সুর যদিও প্রাচীন সময় থেকে চলে আসছে। ছন্দ মিলিয়ে মা দুর্গার বন্দনার পাশাপাশি, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যাগুলিকে গানে তুলে ধরা হয়। মালিয়াড়ায় আগে দু’টি সঙের দল থাকলেও এখন নবরত্ন সঙ্ঘ নামে একটিই রয়ে গিয়েছে।”
তিনি জানান, মালিয়াড়ার প্রায় ১৯টি মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে সঙের গান পরিবেশন করেছেন তাঁরা। সাধারণ মানুষ থেকে পুজোকর্তা, প্রশংসা-পুরস্কার পেয়েছেন সবই।
স্থানীয় পুঁথি ও লোক-সংস্কৃতি গবেষক শুভম মুখোপাধ্যায় বলেন, “সঙের গানের সংস্কৃতি বেশ পুরনো। গোটা বাংলা জুড়ে এক সময়ে তা প্রচলিত ছিল। কোথাও কোথাও সঙে যেমন বিভিন্ন সাজ হয়। তেমনই এ ক্ষেত্রে সঙ হল এক ধরনের ব্যঙ্গ গান।’’
তিনি আরও জানান, সঙের গানে মালিয়াড়ার সমসাময়িক অনেক সমস্যা উঠে আসে। এটি মূল নিবাসীদের সংস্কৃতি থেকে উঠে এলেও বহু উচ্চবিত্ত মানুষও এই সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন।