রান্নার গ্যাসের দাম ন’শো ছাড়িয়েছে। সংসারের খরচ সামলাতে তাই গ্যাস থেকে ফের কাঠকুটোর পথে হাঁটতে হচ্ছে অনেক পরিবারকে।
মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় আমজনতার নাভিশ্বাস উঠেছে। রান্না ঘরেও শ্বাস নেওয়া দায়। কারণ আগের মতোই রান্নাঘরে ফিরেছে ধোঁয়ার পরিবেশ। রান্না ঘরের এক কোণে এলপিজি গ্যাসের সিলিন্ডার সরিয়ে রেখে, উনুনো শুকনো ডালপালা গুঁজে রান্না করছিলেন সিউড়ির নগরী গ্রামের ববি রায়। ধোঁয়ায় কষ্ট সহ্য করে করে রান্না করতে করতে তিনি বললেন, ‘‘উপায় কী বলুন তো! পাঁচ জনের পরিবারে সারা মাসে কষ্ট করে আয় চার থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা। তা থেকে হাজার টাকা খরচ করে গ্যাসের সিলিন্ডার কিনব, দু’মুঠো ভাত খাব! অগত্যা শুকনো ডালপালাই ভরসা।’’
একই সুর মুরারইয়ের ডুরিয়া গ্রামের সাবানা ইয়াসমিনের গলায়। তিনি বললেন, ‘‘উজ্জ্বলা গ্যাস পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মতো হাজার তিনেক টাকা আয়ের দুঃস্থ পরিবারের পক্ষে এত দামে গ্যাসের সিলিন্ডারের কেনা সম্ভব নয়। তিন সন্তান নিয়ে সংসার চালাব না রান্নার গ্যাস কিনব? তাই পাটকাঠি ও খড় দিয়েই রান্না হচ্ছে।’’
সুবিধের কথা ভেবে এখনও গ্যাস সিলিন্ডার তুলে রাখেননি দুবরাজপুরের খয়েরবন গ্রামের সুপ্রিয়া গোপ। তবে সিলিন্ডার ফাঁকা হলেও সেটা সময় মতো ভরাতে পারছেন না অভাবের জন্য। তখন কাঠ বা কয়লার উনুনই ভরসা। সুপ্রিয়া বলছেন, ‘‘স্বামী একটি ছোট গাড়ির চালক। সীমিত আয়। দুই সন্তান, শাশুড়ি নিয়ে মোট পাঁচ জনের সংসার। দু’বছরে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ৫০০ থেকে বেড়ে ডবল হতে চলল। ভর্তুকি মেলে মাত্র ২৮-৩০টাকা। কী করে পারা যাবে? আয় তো বাড়েনি।’’
অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে পরপর দু দফায় দাম ৫০ টাকা বেড়ে ১সেপ্টেম্বর থেকে ভর্তুকিহীন রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম হয়েছে ৯১১ টাকা। গত বছর নভেম্বরেও সিলিন্ডার পিছু দাম ছিল ৬২০ টাকা। শুধু চলতি বছরই এলপিজি’র দাম বেড়েছে ২৪১ টাকা। অন্যদিকে তলানিতে পৌঁছেছে সরকারি ভর্তুকি। সেটাই চরম সঙ্কটে ফেলেছে আম নাগরিককে। বিশেষ করে করোনা আবহে যখন একমাত্র সরকারি চাকুরে ছাড়া অধিকাংশের আয়ে কোপ পড়েছে। করুণ অবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের উজ্জ্বলা যোজনার প্রাপকদের।
তথ্য বলছে, আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত সমীক্ষা অনুযায়ী যে পরিবারগুলির কোনও রান্নার গ্যাসের সংযোগ ছিল না সেই সব পরিবারের কোনও মহিলা সদস্যের নামে ‘প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা’ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল। বীরভূম জেলায় ওই প্রকল্পে রান্নার গ্যাসের সংযোগ পেয়েছেন প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ মহিলা। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার করা সমীক্ষাই বলছে, ৭৫.৭৩ শতাংশ গ্রাহকই সংযোগ পেয়েও এত দাম দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার হয় ভরাতে পারছেন না বা গ্যাস ওভেন কিনতে সক্ষম হচ্ছেন না। সারা বছরে ৩ থেকে ৪টি সিলিন্ডার ব্যবহার করছে সামান্য কিছু পরিবার। সেটা আরও কমছে দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে।
উজ্জ্বলা যোজনার গ্রাহকরা তো বটেই, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে সঙ্কটে নিম্নবিত্ত পরিবার গুলিও। কী ভাবে গ্যাসের খরচ কমাতে হয় কেউ সেটা ইউটিউব দেখে জানার চেষ্টা করছেন। কেউ প্রেসারকুকারের ব্যবহার বাড়িয়ে যথাসম্ভব গ্যাস বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সকলেই চাইছেন ২৮-৩০ দিনের বদলে যাতে একটি সিলিন্ডার আরও ৫-৭দিন বেশি চলে। কেউ ইনডাকশন ওভেনের মতো বিকল্প পথ খুঁজছেন।