blood bank

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত-সঙ্কট, ভোগান্তি

বিষ্ণুপুর মহকুমায় প্রচুর থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সঙ্কটে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

বিষ্ণুপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:১৬
Share:

রক্ত কখন মিলবে, চলছে অপেক্ষা। শনিবার বিষ্ণুপুরে। ছবি: শুভ্র মিত্র।

রক্তাল্পতায় ভুগছে বিষ্ণুপুর সরকারি ব্লাড ব্যাঙ্ক। সমস্যায় পড়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়েরা। রক্ত জোগাড় করতে নাজেহাল অবস্থা থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তের পরিজনদের।

Advertisement

শনিবার বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কে খোঁজ করে জানা যায়, শুক্রবার রক্তদান শিবির থেকে ৩২ ইউনিট রক্ত পাওয়া গিয়েছে। তার মধ্যে ২১ ইউনিট রক্ত এ দিন বেরিয়ে যায়। আগে পড়েছিল তিন ইউনিট রক্ত। বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘মাসে গড়ে ৫০০-৫৫০ ইউনিট রক্তের চাহিদা থাকে। কিন্তু চলতি মাসে সেই অনুযায়ী, রক্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তাই হাসপাতালের রোগীদের ডোনার নিয়ে এসে রক্ত সংগ্রহ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। টানা কয়েকটি শিবির হলে, এই সমস্যা আশা করি কাটবে।’’

কেন এই সমস্যা?

Advertisement

ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীরা জানাচ্ছেন, করোনা ছড়ানোর পর থেকেই রক্তের জোগান কমে গিয়েছে। সে ভাবে রক্তদানের শিবির হচ্ছে না। যদি বা দু’-একটি শিবির থেকে ৪০-৫০ ইউনিট রক্ত আসছে, চাহিদা এমনই যে তা এক দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিষ্ণুপুর মহকুমায় প্রচুর থ্যালাসেমিয়া রোগী রয়েছেন। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি সঙ্কটে। সমস্যা কাটাতে অবিলম্বে অনেকগুলি রক্তদান শিবিরের প্রয়োজন।

‘বিষ্ণুপুর থ্যালাসেমিক গার্জিয়ান সোসাইটি’র সম্পাদক প্রবীর সেন বলেন, ‘‘এ সময়ে ধান কাটা, আলু লাগানোর কাজে মানুষজন ব্যস্ত। এই মরসুমে গ্রামাঞ্চলে শিবির করার সমস্যা। এ দিকে, কোভিড সংক্রমণের সঙ্গে রাজনীতির ডামাডোলে রক্তদানের শিবির কমে গিয়েছে। সে জন্য ভুগতে হচ্ছে বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের উপরে নির্ভরশীল ৩৩৫ জন থ্যালাসেমিয়া রোগীকে। তাঁদের নিয়ে পরিজনেরা এখন রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ছোটাছুটি করছেন।’’

বাঁকুড়া জেলায় রক্তদান শিবিরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য বড়জোড়ার বাসিন্দার কাঞ্চন বিদ বলেন, ‘‘শুধু থ্যালাসেমিয়ার রোগীরা নয়, সন্তান প্রসবের পরে, প্রয়োজনীয় গ্রুপের রক্ত না মিললে অনেক প্রসূতির জীবনহানিও ঘটতে পারে।’’

বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে প্রথমবার সন্তান প্রসব করেছেন কোতুলপুরের সুপ্রিয়া দিগর। তাঁর রক্তের প্রয়োজন। শনিবার বিষ্ণুপুর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে সুপ্রিয়ার রক্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁর মা অষ্টমী সর্দার। পাত্রসায়র ব্লকের তালসাগরা গ্রামের অনিতা দে রক্তের হিমোগ্লোবিনজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। রক্তের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিলেন অনিতাদেবীর স্বামী শিবপ্রসাদ দে। তাঁরা বলেন, ‘‘কোথা থেকে যে রক্ত পাব, ভেবে পাচ্ছি না! ব্লাড ব্যাঙ্কের কর্মীদের কথায় অপেক্ষা করছি।’’

বিষ্ণুপুরে রক্তদান শিবির আয়োজনে যুক্ত থাকা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য দেবাশিস কর বলেন, ‘‘রক্ত কারখানায় তৈরি করা যায় না। মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। শীতকাল কুয়াশার জন্য পথ দুর্ঘটনাও হামেশায় ঘটে। আপতকালীন পরিস্থিতির জন্য ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকা প্রয়োজন।’’

বিষ্ণুপুর ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসারের আশ্বাস, ‘‘আশা করি, খুব দ্রুত কিছু রক্তদানের শিবির হবে।’’ আশার কথা শুনিয়েছেন বিষ্ণুপুরের রক্তদানের সঙ্গে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য দেবাশিস কর। তিনি জানান, আজ, রবিবার কোতুলপুরের গেলিয়া গ্রামে স্থানীয় একটি ক্লাবের উদ্যোগে বাঁকুড়া ব্লাড ব্যাঙ্কের সহযোগিতায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে। এ ভাবে বিভিন্ন ক্লাব এগিয়ে এলে রক্তের অভাব কিছুটা কাটবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement