খদ্দেরহীন ডোকরা শিল্পডাঙায় বাড়ির দাওয়ায় পসরা সাজাচ্ছেন শিল্পী নিজস্ব চিত্র
বাঁকুড়ার ডোকরা শিল্পের সঙ্গে পরিচিতি নেই এমন মানুষ এই বাংলায় খুঁজে পাওয়া দুস্কর। শুধু বাংলায় নয়, বাঁকুড়ার এই শিল্পের নামডাক এখন দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও। তবে সারাবছর এই শিল্পের বেচাকেনা মূলত নির্ভর করে পর্যটন শিল্পের উপর। বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি মেলাতেও ভাল বেচাকেনা হয় ডোকরা সামগ্রীর। করোনার বাড়াবাড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় রাজ্যের পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে তালা পড়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে মেলা। স্বাভাবিক ভাবে এখন টালমাটাল বাঁকুড়া প্রাচীন এই হস্তশিল্পের বাজার।
২০২০ র গোড়ায় করোনার প্রথম ঢেউ এলোমেলো করে দিয়েছিল সবকিছু। টানা লকডাউনের জেরে বাজার হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন বাঁকুড়া শহর লাগোয়া বিকনা শিল্পডাঙায় বসবাসকারী প্রায় একশো ডোকরা শিল্পী পরিবার। সে সময় রেশনের পাওয়া চাল, গম আর বিভিন্ন মানুষের সাহায্যে কোনোভাবে সামাল দিয়েছিলেন পরিস্থিতি। ডোকরা শিল্পীরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউও সামলেছিলেন নিজেদের মূলধন আর গচ্ছিত টাকার একাংশ ভেঙে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে গত বছর অক্টোবর মাসের পর থেকে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছিলেন ডোকরা শিল্পীরা। বিভিন্ন মেলা ও পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে পর্যটকদের আনাগোনায় ধীরে ধীরে বিক্রি বাড়ছিল। পর্যটন মরসুমে ঢালাও বিক্রির আশায় বিভিন্ন সমবায়, ব্যাঙ্ক ও মাইক্রো ফিনান্স সংস্থার কাছে ঋণ নিয়ে বেশি বেশি শিল্প সামগ্রী তৈরী করেছিলেন শিল্পীরা। কিন্তু ফের করোনার বাড়বাড়ন্ত শিল্পীদের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে।
সরকারি বিধিনিষেধে বন্ধ সমস্ত পর্যটনকেন্দ্র। পর্যটকশূন্য রাজ্যের অধিকাংশ পর্যটনস্থল। বন্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মেলা। স্বাভাবিক ভাবেই ডোকরা শিল্পীদের হাতে তৈরি শিল্পসামগ্রীর বিক্রিবাটা নেই। একপ্রকার কর্মহীন দিন কাটছে ডোকরা শিল্পীদের। বিকনা ডোকরা শিল্পপাড়ায় এখন উধাও চেনা ব্যস্ততার ছবি।
বিকনা শিল্পডাঙার ডোকরা শিল্পী হরেন্দ্র নাথ রাণা বলেন, ‘‘করোনার একের পর এক ঢেউ আমাদের ধীরে ধীরে সর্বনাশের পথে নিয়ে যাচ্ছে। চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার এই পেশা ছেড়ে অনেক শিল্পী অন্য কাজে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন। এই অবস্থায় বিখ্যাত এই কুটিরশিল্পকে টিকিয়ে রাখাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।’’ বিকনা শিল্পডাঙার আর এক ডোকরা শিল্পী অঞ্জলী কর্মকার বলেন, ‘‘আমরা এই এলাকার একশোটি পরিবারের সকলেই ডোকরা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। আমাদের বিকল্প কোনও উপার্জন নেই। এবার পর্যটন মরসুমে ভালো বিক্রির আশায় মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে বহু ডোকরা শিল্প সামগ্রী তৈরি করে রেখেছি। কিন্তু কেনার লোক নেই। জানি না এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে চলবে আমাদের সংসার।’’