মঙ্গলবার বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র
বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে জমি দেওয়ার পরে কেটে গিয়েছে ১৩ বছর। কিন্তু সমস্ত জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়নি এখনও। এই অভিযোগ তুলে পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে ডিভিসি-র তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জমিদাতা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে আন্দোলনে নামলেন স্থানীয় পাঁচটি পঞ্চায়েতের বাসিন্দাদের একাংশ।
মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল গেট আটকে বিক্ষোভ দেখান ‘জমিহারা কমিটি’র শ’তিনেক সদস্য। বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা আনার রেললাইনের উপরেও বসে পড়েন তাঁদের অনেকে। রাস্তা অবরোধ করা হয়। শালচুড়া গ্রামে বিদ্যুৎকেন্দ্রে জল সরবরাহের জায়গা থেকে সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প আধিকারিক তরুণ কুমারের অভিযোগ, ‘‘আন্দোলনের জেরে দীর্ঘ সময় রেল ও সড়কপথে কয়লা আসতে পারেনি কেন্দ্রে। জল সরবরাহ বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে, উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এ দিন একশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে।’’
নিতুড়িয়া, রঘুনাথপুর ১ ও ২ ব্লকের রায়বাঁধ, গুনিয়াড়া, নতুনডি, নীলডি, বড়রা— এই পাঁচ পঞ্চায়েত এলাকার জমিদাতাদের একাংশ এবং স্থানীয় যুবকেরা মিলে তৈরি করেছেন ‘জমিহারা কমিটি’। এ দিন সেই কমিটির নেতৃত্বেই আন্দোলন হয়। সকালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের মূল গেট আটকে দেওয়ায় ঢুকতে পারেননি কর্মী-আধিকারিকদের অনেকেই। কেন্দ্র সূত্রে জানা যায়, আটকে পড়েছিলেন প্রকল্প আধিকারিক তরুণ কুমারও। পরে, আন্দোলনকারীদের বুঝিয়ে ভিতরে ঢোকেন তিনি।
বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, কর্মসংস্থানের প্রশ্নে তাঁদের সঙ্গে কার্যত ‘প্রতারণা’ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৩, ২০১৯ ও ২০২০ সালে তিন বার কর্মসংস্থানের বিষয়ে কমিটির সঙ্গে চুক্তি করেছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। কমিটির নেতা শ্যামাপদ পরামানিকের দাবি, ‘‘চুক্তিগুলিতে জমিহারাদের মধ্যে থেকে প্রতি মাসে চার জনকে প্রকল্পের ‘অপারেশন অ্যান্ড মেনটেন্যান্স’-এর কাজে নিয়োগ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এখনও অবধি মাত্র
চার জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। তার মধ্যে আবার দু’জনকে বার করেও দেওয়া হয়েছে।’’
চুক্তি অনুযায়ী ডিভিসি-কে জমিদাতা ও স্থানীয় বেকার যুবকদের বিদ্যুৎকেন্দ্রে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, এই দাবি তোলা হয় এ দিন। এ ছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রে যে সমস্ত বহিরাগত শ্রমিক কাজ করছেন, তাঁদের জায়গায় স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিও তোলা হয়। আন্দোলনের খবর পেয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছন পুরুলিয়া জেলা পরিষদ সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, মধ্যস্থতা করতে গিয়েছিলেন তিনি। দিনের শেষে জমিদাতাদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন সভাধিপতি। তাঁরও অভিযোগ, ‘‘কর্মসংস্থানের প্রশ্নে বারবার ডিভিসি কথার খেলাপ করছে। বাইরের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিতে কাজ করাচ্ছে কেন্দ্রের নানা ঠিকাদার সংস্থা। দীর্ঘ সময় ধরে বঞ্চিত স্থানীয় যুবক ও জমিদাতারা।’’ তাঁর দাবি, কত বাইরের শ্রমিক কাজ করছেন, তা জানতে শ্রম দফতরে চিঠি পাঠাচ্ছেন। এ দিন মূলত সুজয়বাবুর মধ্যস্থতায় ঠিক হয়, ১৬ জানুয়ারি রঘুনাথপুরে মহকুমা প্রশাসনের কার্যালয়ে ডিভিসি কর্তৃপক্ষ ও জমিদাতাদের নিয়ে বৈঠক হবে।
যদিও বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ মানতে চাননি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প আধিকারিক তরুণ কুমার। তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘কেন্দ্রে প্রায় বারোশো ঠিকা শ্রমিক কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে ছ’শো জন প্রকল্প গড়তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোক।’’ বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, জমিদাতাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গিয়ে ইতিমধ্যে তিনশো অতিরিক্ত শ্রমিক নেওয়া হয়েছে। এখন প্রকল্পে নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ কার্যত নেই। প্রকল্প আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘আমরা আন্দোলনকারীদের জানিয়েছি, রঘুনাথপুরের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলেই সেখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।’’ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের আরও দাবি, যে সব কাজ স্থানীয় শ্রমিকদের পক্ষে করা সম্ভব নয়, সে কাজের জন্যই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু দক্ষ শ্রমিক আনা হয়েছে।