ঝুঁকি: সিউড়িতে ডাকঘরে ভিড়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
উজ্জ্বলা যোজনা ছাড়া ডাকঘর থেকে ওই টাকা পাওয়ার কথা নয়। অথচ জনধন অ্যাকাউন্টে টাকা মিলবে— এই বিভ্রান্তির জেরে ভিড় বাড়ছে ডাকঘরেও।
সিউড়ি, রামপুরহাটের মতো বড় ডাকঘরগুলিতে প্রতিদিন আড়াইশো থেকে তিনশো মহিলাকে ডাকঘরের সামনে দিনভর অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পরে অবশ্য খালি হাতে ফেরত যেতে হচ্ছে ৯০ শতাংশ মহিলাকেই। তাতে এক দিকে যেমন লকডাউনের মধ্যে হেঁটে ডাকঘরে আসায় হয়রানি বাড়ছে, অন্য দিকে দূরত্ব-বিধি মানাও শিকেয় উঠেছে।
প্রশ্ন উঠেছে, বিভ্রান্তি মেটানোর জন্য কেন ডাকঘর থেকে প্রচার করা হচ্ছে না। এমন বিভ্রান্তির কারণ কী।
বীরভূমের পোস্টাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট নাজমুল হক চৌধুরী বলছেন, ‘‘কে কী ভাবে এই গুজব ছড়াল, জানা নেই। তবে ডাকঘরে যে ভিড় বাড়ছে, সেটা অস্বীকার করার উপায়ও নেই। বিভ্রান্তির শিকার অধিকাংশ মহিলাকেই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। এ জন্য পোস্টঅফিসে মাঝে বোর্ডও ঝোলানো হয়েছিল। কিন্তু লাভ কিছু হয়নি।’’
জনধন অ্যাকাউন্ট থাকা মহিলাদের জন্য লকডাউন চলাকালীন আর্থিক অনুদান বাবদ এপ্রিল, মে ও জুন— এই তিন মাস ৫০০ টাকা করে বরাদ্দ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেই টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক বা গ্রাহক পরিষেবাকেন্দ্রগুলিতে ভিড় জমাচ্ছেন প্রচুর মহিলা।
ডাক-কর্তারা স্পষ্ট জানাচ্ছে, ইন্ডিয়ান পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কের (আইপিপিবি) অ্যাকাউন্ট রয়েছে যে সব মহিলার এবং যাঁরা সেই নম্বর উজ্জ্বলা যোজনায় রান্নার গ্যাস সংযোগ নেওয়ার সময় গ্যাস ডিলারের কাছে দিয়েছিলেন, কেবল তাঁদেরই অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে। কাজেই অপেক্ষমান ভিড়ের মধ্যে মুষ্টিমেয় কয়েক জনই সেই টাকা পাচ্ছেন। কিন্তু, সকলে টাকা পাবেন—এই ধারণা করে প্রতিদিনই মহিলারা সকাল সকাল এসে ডাকঘরের সামনে লাইন দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবারও রামপুরহাট হেড পোস্ট অফিসের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন নূরনেহার বিবি, বাতাসি লেটরা। একই ভাবে সিউড়ি হেড পোস্ট অফিসের বাইরে দাড়িয়ে ছিলেন মল্লিকা বাগদি, পিঙ্কি বাগদিরা। কেন অপেক্ষা করছেন, সেটারই সঠিক জবাব নেই তাঁদের কাছে।
গত বছর মাঝামাঝি সময়ে শিবির করে পোস্ট পেমেন্ট ব্যাঙ্কের নতুন অ্যাকাউন্ট খোলানোর জন্য বিশেষ অভিযান চালিয়েছিল ডাক বিভাগ। তিন রকমের সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। রেগুলার, ডিজিটাল এবং বেসিক সেভিংস অ্যাকাউন্ট। প্রত্যেক ক্ষেত্রে স্বল্প হারে সুদের ব্যবস্থা রয়েছে। ডাক বিভাগ সূত্রের খবর, এই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের মহিলা গ্রাহকদের মধ্যেই কোনও ভাবে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় অনুদান পাওয়ার বিষয়ে। অনেকেই ভাবছেন, ডাকঘরেই টাকা মিলবে। অন্যদিকে অনেক মহিলা উজ্জ্বলা যোজনার সংযোগ নেওয়ার সময় ডাকঘরের সেভিংস অ্যাকাউন্ট নম্বর না দিয়ে থাকলেও কৌতূহলী হয়ে লাইন দিচ্ছেন। কিন্তু, দিনের শেষে হতাশ হতে হচ্ছে।
পোস্টাল সুপার বলেন, ‘‘এমন হওয়ার কথা নয়। কারণ যাঁদের উজ্জ্বলা গ্যাস যোজনায় টাকা ঢুকছে, তাঁদের আমরাই ফোন করে ইনফর্ম করছি। একই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলার প্রতিটি সাব পোস্টঅফিস এবং ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিসগুলিতে। হয় ওই মহিলা গ্রাহকদের ডাকঘরে ডেকে, নতুবা প্রয়োজনে বাড়ি গিয়েও ওই টাকা পেমেন্ট করা হচ্ছে। তার পরেও ভিড় কমছে না।’’