Coronavirus

কাঁচামালের অভাবে রোজগার হারিয়েছেন বিড়িশিল্পীরা

সানোয়ারা বিবির মতো বিড়ি বেঁধে রোজগার করতেন এলাকার আরও শতাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েক হাজার পুরুষ মহিলা।

Advertisement

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২০ ০৫:০৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

সানোয়ারা বিবি। বাড়ি নলহাটি থানার লোহাপুরের রনহা এলাকায়। বিড়ি বেঁধে সংসার চালান। করোনা ঝড়ে এখন কাজ বন্ধ। কীভাবে সংসার চালাবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। স্বনির্ভর দল থেকে ঋণ নিয়েছেন। দিতে পারছেন না স্বনির্ভর দলের মাসিক কিস্তির টাকাও।

Advertisement

সানোয়ারা বিবির মতো বিড়ি বেঁধে রোজগার করতেন এলাকার আরও শতাধিক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কয়েক হাজার পুরুষ মহিলা। নলহাটি থানার মোস্তফাডাঙা পাড়া, নগড়া, কয়থা, সুকরাবাদ, ভবানীপুর, মুরারই থানার রাজগ্রাম অঞ্চল, গোঁড়শা অঞ্চল, পাইকর থানার রুদ্রনগর, মিত্রপুর, জাজিগ্রাম অঞ্চল মাড়গ্রাম থানার মাড়গ্রাম সহ সিউড়ি এবং বোলপুর মহকুমা এলাকাতেও বিভিন্ন অঞ্চলে বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার শ্রমিক রয়েছেন। করোনা ঝড়ে ওই সমস্ত বিড়ি শিল্পীরা বর্তমানে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। জেলার বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও কাঁচামালের জোগানের অভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। ব্যবসায়ীরা জানান মুখ্যমন্ত্রী বিড়ি শিল্পে ছাড়ের কথা বললেও লকডাউনে ব্যবসায়ীরা যেমন বাইরে বেরোতে পারছেন না।

নলহাটি থানার কয়থা ১ অঞ্চলের মধ্যে মোস্তাফাডাঙাপাড়া গ্রামে ৬০০ পরিবার বাস করে। এদের মধ্যে প্রায় ৫০০ পরিবার বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কয়েক বছর আগে এই গ্রামে বিড়ির মশলা এবং বিড়ি পাতার জোগান দেওয়ার জন্য পাঁচ-ছয়টি দোকান ছিল। বর্তমানে ওই সমস্ত দোকান উঠে গেলেও গ্রামের অধিকাংশ মহিলারা বিড়ি বাঁধার কারিগর হিসাবে কাজ করেন।

Advertisement

গ্রামেই বর্তমানে ২০-২৫ জন ব্যবসায়ী রামপুরহাট, নলহাটি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত সহ মুর্শিদাবাদ জেলায় বিড়ির জোগান দেয়। আবার মুরারই থানার রাজগ্রাম এলাকার বিড়ি ব্যবসায়ীরা লাগোয়া রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও বিড়ির জোগান দেন।

বিড়ি ব্যবসায়ী হাসিবুল শেখ জানালেন, রামপুরহাট শহরে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার লক্ষ বিড়ির জোগান দেন তিনি। বিড়ি বাঁধার জন্য ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে পাতা রামপুরহাট থেকে কিনে আনেন। ১০০ টাকা কেজি দরে মশলা কেনেন। এছাড়া নলহাটি থেকে বিড়ি বাঁধার সুতো এবং প্যাকেট করার জন্য প্লাষ্টিকের প্যাকেটে নিজের প্রতিষ্ঠানের লেবেল ছাপিয়ে নিয়ে আসতেন। হাসিবুল জানালেন গ্রামের কারিগররা ছাড়া লোহাপুর এলাকার রনহা, সুকরাবাদ, ভবানীপুর এলাকার কারিগররা বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। কারিগরদের মধ্যে অধিকাংশ মহিলা। মহিলারা বাড়ির কাজ সামলিয়ে বিড়ি বাঁধার কাজ করেন। একেকজন মহিলা একাই এক থেকে দেড় দিনের মধ্যে এক থেকে দেড় হাজার বিড়ি বাঁধতে পারেন। একহাজার বিড়ি বাঁধার জন্য কারিগররা ১০০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পারিশ্রমিক পেয়ে থাকেন।

বিড়ি ব্যবসায়ী মনিরুল শেখ বলেন, ‘‘গ্রামের মহিলারা বিড়ি বেঁধে তাদের আয় থেকে বিভিন্ন স্বনির্ভর দল গঠন করেছেন। ওই সমস্ত স্বনির্ভর দল বিভিন্ন ব্যঙ্ক থেকে ঋণ পেয়ে থাকেন। সংসার চালিয়ে ঋণ পরিশোধ করা, ছেলে মেয়ের পড়াশোনার খরচ সবই হয় বিড়ি বাঁধার আয় থেকে। লকডাউন পরিস্থিতিতে বিড়ি শিল্প প্রায় ধ্বংসের মুখে।’’

এক বিড়ি ব্যবসায়ী জানালেন, বৈশাখ মাসে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর সহ বিহার থেকে আদিবাসীরা কেঁন্দু পাতা শুকিয়ে বিড়ির পাতার জোগান দেন। লকডাউনের জন্য ওই পাতার জোগান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পড়েও বিড়ি ব্যবসায় সমস্যা হবে।

জেলার বিভিন্ন প্রান্তের বিড়ি ব্যবসায়ীরা জানান, লকডাউনের জন্য রামপুরহাট, নলহাটি, লোহাপুর বিভিন্ন এলাকায় যাঁরা বিড়ির মশলা এবং পাতার জোগান দেন তাঁরা ঝাঁপ বন্ধ করে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী লকডাউন চলাকালীন বিড়ি শিল্পে ছাড়ের কথা ঘোষণা করলেও বাজারে কাঁচামাল মিলছে না। মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান থেকে বিড়ি তৈরির মশলা, পাতা কিনতে গেলে দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে বিড়ি শিল্পের প্রতি নির্ভরশীল হাজার হাজার শ্রমিক প্রায় বেকার হয়ে বাড়িতে বসে আছেন। ধুঁকছে জেলার বিড়ি শিল্প।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement