অমিল: ভ্যাকসিন নেই। বিজ্ঞপ্তি সিউড়ি পুরসভার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মঙ্গলবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিকাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি তৈরি থাকতে বলা হল বেসরকারি নার্সিংহোম, হাসপাতালকেও। মঙ্গলবারই প্রতিটি বেসরকারি নার্সিংহোম এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। সেখানেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি বলছেন, ‘‘প্রতিটি নার্সিংহোম বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে দশটি শয্যা বিশিষ্ট আইসোলেটেড ওয়ার্ড করতে। যেখানে উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের ভর্তি রাখা যায়। কারণ, যে হারে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে তাতে শুধু সরকারি ব্যবস্থাপনার উপরে নির্ভরশীল থাকলে হবে না।’’ বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার মধ্যে সিউড়ি ও বোলপুর দুটি মহকুমা ঢুকে রয়েছে। সেখানে বেসরকারি নার্সিংহোম এবং হাসপাতালের মিলিত সংখ্যা ৭০টির মতো। স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, ‘‘সেখানে যদি কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা দেওয়া বা পৃথক করার ন্যূনতম ব্যবস্থা তৈরি থাকে, তা হলে পরিষেবাটুকু পেতে পারবেন না আক্রান্তরা। অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা তো বটেই, থাকলে সিসিইউ, আইসিইউ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে।’’
আর সরকারি পরিকাঠামোর হাল কেমন। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় কোভিড হাসপাতাল বলে কিছু নেই। এই মুহূর্তে আক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘সারি’ ওয়ার্ডে। উপসর্গ যুক্ত কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা করার মতো জেলায় মাত্র একটি কোভিড হাসপাতাল রয়েছে। সেটা বোলপুরে। ৬০ শয্যার হাসপাতালে ইতিমধ্যেই ৫৮ জন রোগী ভর্তি আছেন। আবার রামপুরহাট থেকেও সঙ্কটজনক রোগীদের মাঝে মধ্যেই বোলপুরে নিয়ে আসা হচ্ছে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ বলছেন, ‘‘বোলপুর হাসপাতালটিকে ৯০ শয্যা বিশিষ্ট করার প্রস্তাব স্বাস্থ্য ভবনে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া সিউড়ি জেলা হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডকে ৫০ শয্যার কোভিড ওয়ার্ডে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। রয়েছে নিরাময় সেফ হোমও।’’ অন্য দিকে, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলা নলহাটিতে একটি সেফ হোম করার পথে হাঁটছে। উপসর্গ যুক্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্যও স্বনির্ভর হওয়ার ভাবনা নেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণের বহর দেখে তাতেও সন্তুষ্ট থাকা যাচ্ছে না। সেটা সংক্রমণের রেখাচিত্র দেখলেই বোঝা যাবে। রামপুহাট স্বাস্থ্য জেলার প্রকাশিত তথ্যে ডিসেম্বর, জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংক্রমণ ছিল যথাক্রমে ১৯৫, ৫০, ১৬ জন। সেটাই মার্চে হয় ৪৭৩ জন। এপ্রিলের ১২ দিনের মধ্যে নতুন করে সংক্রমিত হয়েছেন ১৮৪৭ জন। প্রায় একই ছবি বীরভূম স্বাস্থ্য জেলাতেও। ফেব্রুয়ারি মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মাত্র ৪২ জন। সেখানে মার্চে ১২৬ জন ও এপ্রিলের প্রথম ১১ দিনে ১১০০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবারই তিনশোর বেশি নতুন আক্রান্ত পাওয়া গিয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ও ভোটবাজারে কোভিড বিধিকে তোয়াক্কা না করার ফল যে আরও মারাত্মক হতে পারে বলে আশঙ্কা বহু দিনের। সোমবার পর্যন্ত শুধু বীরভূম স্বাস্থ্য জেলায় অ্যাক্টিভ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল এগারোশোর বেশি। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলায় সংখ্যাটা ছিল দু’হাজারেরও বেশি। ফলে এত সংখ্যক রোগীর হাসপাতাল না প্রয়োজন হলেও আইসোলেশনে রেখে পর্যবেক্ষণের জন্যই ভীষণ প্রয়োজনীয় হল পরিকাঠামো। চেষ্টা শুরু হয়েছে তারই।