ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবীর। ছবি: সংগৃহীত।
বাইরে লাগাতার মুখ খুলে দলের বিড়ম্বনা তৈরি করেছেন এক হুমায়ুন কবীর। দলের কোপের মুখে পড়ে শো-কজ়ের চিঠিও পেয়েছেন। এ বার বিধানসভার মধ্যে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে ‘অস্বস্তিকর’ প্রসঙ্গ তুলে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের আর এক হুমায়ুন কবীর! পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার বিধায়কের প্রশ্ন, জাতীয় স্তরে বিজেপির বিরোধিতায় কংগ্রেস সম্পর্কে তৃণমূলের অবস্থান কী?
কংগ্রেস প্রসঙ্গে তৃণমূলের অবস্থান ঘিরে নানা চর্চা শুরু হলেও একেবারে মমতার সামনেই বৃহস্পতিবার সেই প্রশ্ন এনে ফেলেছেন প্রাক্তন আইপিএস হুমায়ুন। বিধানসভার অধিবেশনে বিরোধী বিজেপি বিধায়কদের উপস্থিতিতে অস্বস্তির মধ্যে পড়লেও কৌশলে জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী। তবে এই ঘটনায় শাসক শিবিরে আলোড়ন তৈরি হয়েছে।
কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েন নতুন কিছু নয়। তবে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই এবং গত লোকসভা নির্বাচনের সময়ে ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ তৈরি হওয়ার পরে তা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে। বিরোধী শিবিরে কংগ্রেসের কর্তৃত্ব নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলায় তৃণমূলের অবস্থান ঘিরেও সংশয় তৈরি হয়েছে। বিধানসভার প্রশ্নোত্তর-পর্বে এ দিন কিছুটা ঘুরিয়ে সেই প্রশ্ন তুলেছেন ডেবরার তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন। কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ আইনে যে বদলের প্রস্তাব করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই এ দিন হুমায়ুন জানতে চেয়েছেন, এই ব্যাপারে লোকসভার প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূল কোনও সমন্বয়ে যাচ্ছে কি না। শাসক শিবিরের রাজনৈতিক অস্বস্তি এড়িয়ে জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এই প্রশ্ন বিধানসভার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এটা দলীয় বিষয়। আমরা প্রতিবাদে নেতৃত্ব করছি। আরও অনেকে আছে।’’
আগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতির মতো বর্তমান লোকসভায় বিরোধী জোট ঘিরে ফের চর্চা মাথা তুলেছে। তার মধ্যেই এ দিন হুমায়ুন বিজেপি-বিরোধী শিবিরে কংগ্রেস-সহ অন্য আঞ্চলিক দলের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি মমতার সামনে নিয়ে এসেছেন। বিধানসভার কাজ সেরে মমতা এ দিনই গিয়েছিলেন রাঁচীতে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে। ফেরার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর উদ্দেশে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’ এবং কংগ্রেসের বিষয়ে তৃণমূলের অবস্থান সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছিল। কংগ্রেস প্রসঙ্গে দৃশ্যত কোনও আগ্রহ না-দেখিয়েই মমতা বলেছেন, “লোকসভায় যা অবস্থান নেওয়ার, সেটা আমাদের কারও একার বিষয় নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলের চেয়ারপার্সন আমি। লোকসভায় আমাদের দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মুখ্য সচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যসভায় আমাদের দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন, উপ-নেতা সাগরিকা ঘোষ এবং মুখ্য সচেতক নাদিমুল হক। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁরা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে আমি আমার মতামত জানাব।’’ তৃণমূল সূত্রের মতে, মমতা বুঝিয়ে দিয়েছেন লোকসভায় দলের অবস্থান বা কংগ্রেস সম্পর্কে কৌশল ঠিক করার জন্য সুদীপ-ডেরেকরাই উপযুক্ত। তার জন্য সাধারণ ভাবে মমতা বা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাথা ঘামাতে হবে না!