মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সাম্প্রতিক চিকিৎসক-আন্দোলনের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করবে রাজ্য সরকার।
আর জি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের সাড়ে তিন মাস পরে বৃহস্পতিবার এই ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে আন্দোলন চলাকালীন সরকারি কাজ না-করে যে চিকিৎসকেরা বেসরকারি হাসপাতালে কাজ করেছেন, সে সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিধানসভায় নিজের হাতে থাকা বিভিন্ন দফতর নিয়ে এ দিন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই রাজ্যের ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে চলতি বছরে সরকারি খরচ জানতে চেয়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক সমীর জানা। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২১ লক্ষ ২৭ হাজার ২৪৯ টাকা খরচ করে রাজ্য সরকার দু’হাজার ৬৮৪ জনের চিকিৎসা করিয়েছে। তার পরে অতিরিক্ত প্রশ্ন হিসেবে আন্দোলনের সময়ে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পের খরচ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হয়েছে কি না, জানতে চান ওই বিধায়ক। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কখনও কখনও অপ্রিয় সত্য বলতে নেই। খুব ভাল করে তদন্ত করেছি। অনেকটা পেয়েছি। সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’
সরকারি ভাবে এই প্রথম বিষয়টি সামনে আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে আগে রাজনৈতিক স্তরে বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দিকে আঙুল তুলেছে তৃণমূল। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনরত চিকিৎসকদের একাংশ সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি করলেও বেসরকারি হাসপাতালে অর্থের বিনিময়ে চিকিৎসা করেছেন। এমনকি, ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে সরকারি অর্থে রোগীর চিকিৎসাও করেছেন তাঁরা। আন্দোলনের উত্তাপ কিছুটা কমে আসতেই এ বার সরকারের তরফে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। একাধিক বার চিকিৎসকদের দাবিগুলিকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করলেও মুখ্যমন্ত্রীর গলায় এ দিন তাঁদের নিয়ে প্রশ্ন ছিল স্পষ্ট। তাঁর মন্তব্য, ‘‘স্বাস্থ্যসাথীর টাকার অপব্যবহার হয়েছে। যাঁরা কাজ করলেন না ( সরকারি হাসপাতালে) আবার টাকাও নেবেন! এ টাকা জমগণের। শাস্তি হবে।’’
চিকিৎসকদের আন্দোলনের জন্য ‘স্বাস্থ্যসাথী’র টাকা ‘অপব্যবহারে’র যুক্তি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠছে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘আর জি কর আন্দোলনকে প্রথম থেকেই বদনাম করার চেষ্টা করে যাচ্ছে সরকার ও শাসক দল। এটাও তার অঙ্গ। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়ে রোগী ‘স্বাস্থ্যসাথী’র সুবিধা পেতে পারেন, সেই কথা প্রকল্পের শর্তের মধ্যে আছে। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা তো মূলত বিনামূল্যে। তা হলে চিকিৎসকদের আন্দোলন হোক বা না-হোক, রোগীরা বেসরকারি জায়গায় গেলে ‘স্বাস্থ্যসাথীর অপব্যবহার’ কী ভাবে হবে?’’
‘স্বাস্থ্যসাথী’র সূত্রেই এ দিন ছাত্র-ছাত্রীদের ‘ট্যাব’-এর টাকা ‘চুরি’র প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেঠেন, ‘‘ঝাড়খণ্ড, রাজস্থানের মতো কয়েকটি জায়গা থেকে এটা করা হয়েছে। ‘জামতাড়া গ্যাং’ করেছে। দু’হাজারের মতো (চুরি) ঘটনা ঘটেছে। যাদের টাকা গিয়েছে, তারা প্রায় সবাই পেয়ে গিয়েছে।’’ তার পরেই তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলিশ এই চক্রের কান ধরে ফেলেছে! এ বার মাথাকেও ধরা হবে।’’