বেশ কিছুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে উত্তোলন। অশোকনগরের বাইগাছিতে ওএনজিসির তেল ও গ্যাস উত্তোলন কেন্দ্র। ছবি: সুজিত দুয়ারি।
রাজ্য সরকারের উদাসীনতায় অশোকনগরে ওএনজিসির প্রকল্প থেকে তেল-গ্যাসের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হতে পারছে না বলে অভিযোগ তুলল কেন্দ্র। সংসদে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরীর দাবি, রাজ্য উত্তোলনের জন্য জমি লিজ় (পেট্রোলিয়াম মাইনিং লিজ় বা পিএমএল) মঞ্জুরে গড়িমসি করাতেই দেরি হচ্ছে। ২০২০ থেকে একাধিক বার লিজ় মঞ্জুরের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও তা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনের কেউ সরাসরি মুখ না খুললেও, প্রশাসনিক সূত্রের খবর, লিজ় দেওয়াকে কেন্দ্র করে আরও ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় সাংসদ জগন্নাথ সরকারের এক প্রশ্নের উত্তরে পুরী জানান, পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগরে যে তেল-গ্যাসের মজুত রয়েছে, তা নিয়ে ২০১৮-র ২৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। তার পরেই ২০২০-র ১০ সেপ্টেম্বর ওএনজিসি খননের কাজ চালাতে ৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার জমি লিজ়ে নেওয়ার জন্য রাজ্যের কাছে আবেদন করে। ওএনজিসিকে পিএমএল দেওয়ার জন্য যে কেন্দ্র সুপারিশ করেছে, সেই তথ্যও ওই বছরই ২১ অক্টোবর রাজ্যকে জানায় তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি। পুরীর দাবি, তার পর থেকে ২০২৩-এর ফেব্রুয়ারিতে এবং গত জানুয়ারিতে ফের রাজ্যের কাছে পিএমএল মঞ্জুরের জন্য দরবার করেছে ওএনজিসি। এ বছরের আবেদনটি কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির কাছে পেশ করেন ডিরেক্টর জেনারেল (হাইড্রোকার্বন)। মঞ্জুরের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে গত জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত পূর্বাঞ্চলের কাউন্সিলের বৈঠকেও বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।
তবে প্রথমে ৫.৮৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকার জন্য লিজ় চাইলেও, বর্তমানে ৯৯.০৬ বর্গ কিলোমিটারের জন্য তা দরকার বলে জানান পুরী। কারণ হিসাবে বলেন, সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ এবং পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে জানা গিয়েছে, অশোকনগরে অতটা অঞ্চল জুড়েই তেল-গ্যাস রয়েছে। সেই অনুযায়ী ফিল্ড ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানও (এফডিপি) তৈরি। ওই পরিকল্পনা অনুমোদন করেই ৯৯.৬ বর্গ কিলোমিটারের জন্য লিজ়ের সুপারিশ করেছে কেন্দ্র। পুরীর দাবি, কেন্দ্রের সায় এবং সুপারিশের কথা জানিয়ে পিএমএল মঞ্জুরের জন্য রাজ্যকে ফের ৫ নভেম্বর চিঠি দিয়েছে ওএনজিসি।
এর আগে খননের জন্য লিজ় দেওয়ার ব্যাপারে রাজ্য জানিয়েছিল, ওই জমিতে বহু পরিবার বাস করে। তাদের উচ্ছেদ করতে হবে। তাই সমস্যার সমাধান নিয়ে তারা চিন্তা-ভাবনা করছে তারা। তবে এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার অনুমতি দেয়নি, এমন কথা আমার জানা নেই। ওএনজিসির কর্তারা আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। তারাও এ কথা বলেননি।’’ তৃণমূল সূত্রের দাবি, প্রথম থেকেই রাজ্য সরকার খননকার্য থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে সাহায্য করে আসছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, গোটা বিষয়টি রাজ্য সরকার দেখছে।
এ দিন দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমিক ভট্টাচার্যের দাবি, অশোকনগরে উৎপাদনের জন্য ইতিমধ্যেই ওএনজিসি ১০৪৫.৫৪ কোটি টাকা লগ্নি করেছে। জমি লিজ় পেতে সংস্থা ১৪ বার এবং কেন্দ্রীয় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রক চার বার রাজ্যকে চিঠি দিয়েছে। তেল-গ্যাসের ভান্ডার থাকা সত্ত্বেও তা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করতে না পারায় রাজ্য বিপুল রয়্যালটি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।