ঝুঁকি: এমন সর্ষে খেতেই রয়েছে সাপের ছোবলের ভয়। নিজস্ব চিত্র
চন্দ্রবোড়ার আতঙ্কে দিশাহারা খয়রাশোলের পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েত অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের মানুষ। মাস দু’য়েকের মধ্যে ওই এলাকার বিভিন্ন গ্রামে তিন বছরের এক শিশুকন্যা-সহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে চন্দ্রবোড়ার দংশনে। কী ভাবে চন্দ্রবোড়ার হাত থেকে রেহাই মিলবে তার উত্তরই খুঁজছেন এলাকাবাসী।
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, সাপের ছোবলে সম্প্রতি মারা গিয়েছেন মজুরা গ্রামে এক মহিলা, জুনিদপুরে দুই পুরুষ, ১৫ জানুয়ারি পারুলবোনা গ্রামের এক তরুণ এবং পাইগড়া গ্রামের এক শিশুকন্যা। মৃতদের পরিবার এবং এলাকাবাসী জানাচ্ছেন উদ্বেগের অন্যতম কারণ সাপের ছোবলের পর দুর্গাপুরের বিধাননগর হাসপাতাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও অন্য সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও মৃত্যু আটকানো যায়নি। কাউকে জমিতে কাজ করার সময়, কাউকে আবার পুজোর প্রসাদ খেতে খেতে নদীর চরে হাঁটার সময় ওই সাপ ছোবল দেয়। আগেও এলাকায় চন্দ্রবোড়ার ছোবলে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মাত্র কিছু দিনের এলাকার পাঁচ জনের মৃত্যুর কথা পাঁচড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নাবড়শোল গ্রামের এক ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া জন্মেজয় দাস স্থানীয় থানা, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতি ও স্থানীয় বিধায়ককে জানিয়েছেন। কিন্তু সাপের ছোবল থেকে বাঁচার রাস্তা মেলেনি।
ওই তরুণ যে সাপের উপদ্রব নিয়ে যোগাযোগ করেছিলেন তা জানাচ্ছেন খয়রাশোল থানার ওসি সঞ্জয় শ্রীবাস্তব। তিনি বলছেন, ‘‘সত্যিই ভীষণ সমস্যা হচ্ছে চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে। বিষয়টি আমি বিডিওকে জানিয়েছি।’’ এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ দুটি মৃত্যু হয়েছে জানুয়ারির ১৫ ও ২৫ তারিখে। ১৫ তারিখে মারা যান পারুলবোনা গ্রামে বছর একুশের যুবক শরবিন্দু ব্যাপারি। তাঁকে চন্দ্রবোড়া ছোবল দিয়েছিল অজয় নদের চরে। অন্যদিকে পাইগড়া গ্রামে মায়ের সঙ্গে প্রসাদ খেতে গিয়ে মৃত্যু হয় অণ্বেষা কোনাই নামে ৩ বছরের শিশুটির।
দীর্ঘদীন ধরে বীরভূমে সাপ নিয়ে কাজ করা পরিবেশ কর্মী তথা সিউড়ি অজয়পুর স্কুলের শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস বলছেন, ‘‘মারাত্মক বিষধর সাপ এই চন্দ্রবোড়া। অনেকটা অজগরের ছানার মত দেখতে এই সাপ তিন থেকে ৬ ফুট লম্বা হতে পারে। ধারণত তিন থেকে সাড়ে তিনফুট লম্বা সাপই নজরে পড়ে। বিশেষ করে ফসলের মাঠে বা নদীর ধারে ইঁদুর ধরার জন্য এরা চলে আসে। গায়ের এমন রঙের জন্য পরিবেশের সঙ্গে এমন ভাবে মিশে থাকে চট করে চোখে পড়ে না। কিন্তু শরীরে আঘাত লাগলে বিদ্যুৎ গতিতে হামলা করে এই সাপ।’’ তিনি জানালেন, ফসল কাটার সময় বা জমির আলপথে, নদীর ধারে ঝোপঝাড়ে চলাচলের সময় এই সাপের আক্রমণ ঘটতেই পারে। এ সব ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্কতা জরুরি।
দীনবন্ধুবাবু যা বলেছেন, তা-ই বোঝা গেল দুবরাজপুরের চণ্ডীপুর গ্রামের পাশের মাঠ থেকে সর্ষে কাটার সময় স্থানীয় কয়েকজন চাষির সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে। চন্দ্রবোড়া সাপের আতঙ্ক জাঁকিয়ে বসেছে ওই গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে খবর, গত দু’মাসে একাধিক চন্দ্রবোড়া সাপকে আতঙ্কে পিটিয়েও মারা হয়েছে। ফসলের মাঠ, পুকুরের জল থেকে বাড়ির উঠোন সব জায়গায় চলে আসছে এই সাপ। সর্ষে খেতের পাশেই মাঠ ভরে গিয়েছে ছোলা চাষে। এই সময় গ্রামের কচি কাঁচারা দল বেঁধে মাঠে নামে। কিন্তু পাছে চন্দ্রবোড়া সাপ কামড়ায় সেই ভয়ে বাবা মা রা বাচ্চাদের কিছুতেই খেতে আসতে দিতে চাইছেন না। চাষিরা স্বীকার করছেন, ‘‘একটু দূরে পাঁচড়া পঞ্চায়েত এলাকায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যুও আমাদের গ্রামে আতঙ্কের কারণ।’’