সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে ‘মানুষকে বিভ্রান্ত্র’ করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
স্কুল নয়, আপাতত গ্রামের কোনও এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাস নেবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। স্কুলের ক্লাসের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি ‘সাপ্লিমেন্টারি ক্লাস’। অর্থাৎ, স্কুলের নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে পড়ুয়াদের দক্ষতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘বিশেষ পাঠ’ দেওয়ার জন্যই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিতর্কের মধ্যে বৃহস্পতিবার বিবৃতি দিয়ে এমনটাই জানাল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ।
সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ক্লাস নিতে ‘অঙ্কুর’ নামে যে কর্মসূচির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে ‘মানুষকে বিভ্রান্ত্র’ করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে পুলিশ। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘শিশুদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সঙ্গে আরও ভাল সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমাদের এই উদ্যোগ। কিছু মানুষ এই উদ্যোগকে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাসকে প্রতিস্থাপনের প্রচেষ্টা হিসাবে দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিকৃত, ভুল তথ্য।’’
এই উদ্যোগের সঙ্গে বিদ্যালয়ের ক্লাসের কোনও সম্পর্ক নেই বলে জানিয়েছেন বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের অঙ্কুরের কর্মসূচি সামান্য পরিবর্তন হচ্ছে। স্কুলের বদলে আমরা অন্য জায়গায় এই কর্মসূচি করব। স্কুলে করতে হলে সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিয়ে তা করা হবে।’’ এর পরই তিনি জানিয়েছেন যে, স্কুলের নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে এই ক্লাস নেওয়া হবে। এর সঙ্গে স্কুলের ক্লাসের কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁর ব্যাখ্যা, গ্রামের অনেক পড়ুয়াই আলাদা করে টিউশন নেওয়ার সুযোগ পায় না। তাই তাদের দক্ষতা বাড়াতেই স্কুলের সময়ের বাইরে ‘বিশেষ পাঠ’ দেবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। জেলা পুলিশের বিবৃতিতেও বলা হয়েছে, ‘‘আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষাবিজ্ঞানের যে ক্লাসগুলি নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কোচিং ক্লাসের আকারে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাসের পাশাপাশি চলবে।’’
এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেছেন, ‘‘যদি এটা সত্যিই সাপ্লিমেন্টারি ক্লাস হয়, তাতে কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু, যদি এমনটা হয় যে, স্কুলে শিক্ষক নেই বলে সেখানে পড়ানো হচ্ছে (সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে), সেটা ঠিক নয়। নির্দেশে তেমনটাই রয়েছে ঠিকই, বাস্তবে কী হচ্ছে সেটা দেখা উচিত। রাজ্য সরকারের উচিত পুরো শ্বেতপত্র পাঠানো।’’ তিনি আরও জানিয়েছেন, যে কেউ শিক্ষক হতে পারেন। তবে তাঁর পড়ানোর যোগ্যতা থাকা উচিত।
স্কুল যে হেতু পড়ুয়াদের পরিচিত জায়গা এবং পঠনপাঠনের অনুকূল পরিবেশ। সেই কারণেই ‘অঙ্কুর’ কর্মসূচিতে ‘বিশেষ পাঠ’দানের জন্য স্কুলকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার। তবে এ নিয়ে বিতর্ক হওয়ায় গ্রামের কোনও এলাকায় এই ক্লাস নেওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানালেন এসপি। প্রাথমিকে পড়ুয়াদের অঙ্ক এবং ইংরাজির ‘বিশেষ পাঠ’ দেবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা। জানা গিয়েছে, একটি অসরকারি সংস্থার সাহায্যে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের তরফে ‘অঙ্কুর’ নামের এই কর্মসূচির কথা জানানো হয়েছে। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন যে, পড়ুয়াদের ক্লাস নেওয়ার জন্য যে ১৫০ জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে বাছাই করা হয়েছে, তঁরা পড়াশোনায় ভাল।
প্রাথমিকের পড়ুয়াদের ক্লাস নেবেন সিভিক ভলান্টিয়াররা! বুধবার এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায়। এই নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বিভিন্ন মহলে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, এটা স্থানীয় স্তরে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ছিল। স্কুল শিক্ষা দফতরের কোনও অনুমোদন ছিল না। তাই এই কর্মসূচি আপাতত স্থগিত থাকছে। এর পরেই এ নিয়ে মুখ খুলল বাঁকুড়া জেলা পুলিশ।