—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP
শুধু কৃষ্ণনগর শহরই নয়, কৃষ্ণনগর ১ ব্লকও বরবরই বিজেপিকে সঙ্গ দিয়েছে। যখনই বিজেপি ঠিকঠাক প্রার্থী দিয়েছে, তখনই এই এলাকায় পদ্ম ফুটেছে। সেটা লোকসভা ভোট বা বিধানসভা ভোট, পুরভোট হোক বা পঞ্চায়েত নির্বাচন।
তবে ২০১৮ সালের পর থেকে পঞ্চায়েত এলাকায় সেই প্রবণতা অনকটাই বেড়েছে। এই ব্লকের ভীমপুর, আসাননগর ও পোড়াগাছা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিজেপির একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি হয়েছে। তবে তার অনেক আগে থেকেই কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধানসভার মধ্যে থাকা কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে বিজেপির যথেষ্ট প্রভাব ছিল। একাধিক বার একাধিক গ্রাম পঞ্চায়েতে তাদের প্রধান ছিল।
কৃষ্ণনগর উত্তরের মতো ধারাবাহিক ভাবে না বলেও মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের কেন্দ্র কৃষ্ণনগর দক্ষিণ বিধানসভায় এই নিয়ে পর পর দুটো লোকসভা ভোটে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে। এই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে থাকা কৃষ্ণনগর ২ ব্লক থেকে এগিয়ে থাকছে তৃণমূল আর কৃষ্ণনগর ১ নম্বর ব্লক থেকে এগিয়ে থাকছে বিজেপি। এর মধ্যে কৃষ্ণনগর ১ ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতই হিন্দুপ্রধান আর কৃষ্ণনগর ২ ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত হয় সংখ্যালঘু-প্রধান অথবা মিশ্র এলাকা। অর্থাৎ মূলত কৃষ্ণনগর ১ ব্লক ও শহর এলাকাই বিজেপিকে ঢেলে সমর্থন করে আসছে। আর এই এলাকাই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের একমাত্র হিন্দুপ্রধান এলাকা।
কৃষ্ণনগর দক্ষিণের বিধায়ক উজ্জ্বল বিশ্বাসও বলছেন, “ওই এলাকাটা মূলত হিন্দুপ্রধান। প্রায় ৯০ শতাংশ হিন্দুর বাস।” তাঁর দাবি, “ বিজেপির সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় অর্থাৎ জুলুবাবু ধর্মের বিষয়টাকে সামনে এনে ভোট করেছিলেন। সেই ধারাই এখনও চলে আসছে। তা ছাড়া লোকসভা ভোটে বিজেপি এই এলাকায় প্রচুর টাকা ছড়ায়।” যদিও বিজেপি এই দাবি ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
বিজেপির প্রাক্তন জেলা সভাপতি, কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা কল্যাণ নন্দীর মতে, কোন নির্বাচনে কাকে ভোট দিলে ভাল হবে সেটা ভেবেই এই এলাকার মানুষ ভোট দিতে যায়। তিনি বলেন, “পুরভোট হোক বা বিধানসভা ও লোকসভা ভোটে যখনই আমরা ঠিকঠাক প্রার্থী দিয়েছি, তখনই এই এলাকার মানুষ আমাদের ঢেলে ভোট দিয়েছে। লোকসভা ভোটে জুলুবাবু প্রার্থী হওয়ার পর থেকে এই এলাকায় বিজেপি লিড পেতে শুরু করেছে। আবার কোনও বার বিধানসভা ভোটে জিততে না পারলেও গত বিধানসভা ভোটে মুকুল রায় প্রার্থী হতেই এখানকার মানুষ বিজেপিকে জিতিয়ে দিয়েছে।” তাঁর ব্যাখ্যা, “আসলে ধর্মীয় থেকে শুরু করে ভৌগোলিক ও সামাজিক অবস্থানের কারণে এখানকার মানুষ প্রথম থেকেই বিজেপিমুখী। না হলে প্রতিষ্ঠার এক বছর পর কৃষ্ণনগর শহরের মানুষ বিজেপির প্রার্থীকে পুরসভা ভোটে জেতাত না।”
কৃষ্ণনগর শহরের বাসিন্দা দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, জনতা দলের নেতা কাশীকান্ত মৈত্রের একান্ত ঘনিষ্ঠ শিবনাথ চৌধুরী অবশ্য বিষয়টিকে একটু অন্য ভাবে দেখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, “এই এলাকা মূলত বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় বিজেপির প্রভাব বেশি। ও-পার বাংলা থেকে আসা হিন্দুরা দেশত্যাগের কারণ হিসেবেই বিজেপিকে বেছে নিয়েছেন। বিজেপির পাতা ফাঁদে তাঁরা পা দিয়েছেন।”