রামপুরহাট আদালত চত্বরে সিবিআইয়ের প্রতিনিধিরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম।
কাঁকরতলার বিজেপি কর্মী খুনে অভিযুক্ত লক্ষ্মী বাগদির ‘ফরেন্সিক সাইকোলজিক্যাল এগজামিনেশন’ করাতে চেয়ে বৃহস্পতিবার দুবরাজপুর আদালতের দ্বারস্থ হল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। ওই টেস্ট করানোর অনুমতি সিবিআই পেয়েছে বলেই জানা গিয়েছে।
দুবরাজপুর আদালতের আইনজীবীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি সংশোধনাগারে বন্দি লক্ষ্মীকে জেলেই ওই বিশেষ পরীক্ষা করানো হবে। সিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারক এ দিন সিউড়ির জেল সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন, সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের সঙ্গে এক বিশেষজ্ঞ সংশোধনাগারে গিয়ে অভিযুক্তের ওই পরীক্ষা করবেন। জেল কর্তৃপক্ষ যেন এ ব্যাপারে সহযোগিতা করেন।
অভিযুক্ত এক মহিলার কাছ থেকে সত্যি উদ্ধারে যে টেস্টের আশ্রয় নিতে চলেছে সিবিআই, তেমনটা জেলায় প্রথম বলেই মনে করছেন আইনজীবীদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, এটি এমন এক ধরনের পরীক্ষা যা ‘নার্কো-অ্যানালিসিস’ বা ‘কেমিক্যাল সাইকোঅ্যানালিসিস’ বা ‘ব্রেন ম্যাপিং’-এর সমতুল। যেখানে অভিযুক্ত চাইলেও মিথ্যা বলতে পারবেন না।
এ বছর ১২ জুন কাঁকরতলা থানার নবসন গ্রামে মিঠুন বাগদি নামে বছর পঁচিশের ওই বিজেপি কর্মীকে কুপিয়ে, থেঁতলে খুনের অভিযোগ ওঠে। প্রথম থেকেই শাসকদল দাবি করে এসেছিল, গত বছর ডিসেম্বরের পথ দুর্ঘটনায় মৃত এক যুবকের পরিবারের আক্রোশেই খুন হয়েছেন মিঠুন। এর সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। প্রায় এক দাবি ছিল পুলিশেরও। মিঠুন খুনের ঘটনায় ২৮ অগস্ট সিবিআইয়ের প্রতিনিধি দল নবসন গ্রামে যায়। স্থানীয় ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে নবসন গ্রামের রাস্তায় মোটরবাইকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় রাজু বাগদি (২৪) নামে এক যুবকরের। মিঠুন বাগদি ইচ্ছাকৃত বাইকের ধাক্কায় খুন করেছে বলে অভিযোগ ওঠে। বেশ কয়েক মাস জেল খেটে এ বছর ৫ জুন জামিন পান মিঠুন। অভিযোগ, ১২ জুন মিঠুন সপরিবার বাড়িতে ফিরলে রাজুর স্ত্রী ও পরিজন তাঁদের উপরে চড়াও হন। মিঠুনকে পিটিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ মৃত রাজুর স্ত্রী লক্ষ্মী, দাদা অনিল বাগদি, বৌদি প্রতিমা এবং দুই আত্মীয়া কল্পনা বাগদি, সুন্দরী বাগদিকে গ্রেফতার করে। শেষ দু’জন জামিন পেয়েছেন। বাকিরা সিউড়ি সংশোধনাগারে রয়েছেন।
মঙ্গলবার দুবরাজপুর আদালত থেকে জেলে গিয়ে লক্ষ্মী-সহ তিন জনকে জেরা করার অনুমতি পায় সিবিআই। জেলে গিয়ে তাঁদের কয়েক ঘন্টা ধরে জেরাও করে। কিন্তু সূত্রের খবর, লক্ষ্মী বাগদির বক্তব্যে যথেষ্ট অসঙ্গতি পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তার জেরেই সম্ভবত দুবরাজপুর আদলতে ওই অভিযুক্তকে বিশেষ পদ্ধতিতে জেরা করার আবেদন জানাল সিবিআই।
তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘পারিবারিক হিংসার জেরে একটি খুনকে ভোট-পরবর্তী হিংসা হিসেবে তুলে ধরার কৌশল নিয়েছিল বিজেপি। কেন্দ্রীয় সংস্থাও একই পথে হাঁটছে। এক মহিলাকে এই পদ্ধতিতে জেরা করার আবেদনেই সেই ছাপ স্পষ্ট।’’