‘এনকাউন্টার’ কি ঠিক, মতামতে দু’ভাগ জেলা

তেলঙ্গানায় মহিলা পশু চিকিৎসকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়  চার অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’। শুক্রবার সকালে এই খবর শোনার পর চমকে উঠেছিলেন দেশবাসী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৯
Share:

এনকাউন্টারের স্থলে তেলেঙ্গনা পুলিশ

তেলঙ্গানায় মহিলা পশু চিকিৎসকে গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় চার অভিযুক্তের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের সঙ্গে ‘এনকাউন্টারে’। শুক্রবার সকালে এই খবর শোনার পর চমকে উঠেছিলেন দেশবাসী। আকস্মিকতার ঘোর কাটিয়ে প্রাথমিক ভাবে এই ঘটনাকে অনেকে পুলিশের ‘উপযুক্ত পদক্ষেপ’ আখ্যা দিলেও পরে ধীরে ধীরে তার বিরুদ্ধ মতবাদও জোরালো হয়েছে। এই ঘটনাকে ‘বিচার’ বলা যায় কি না তা নিয়ে যুক্তি সাজিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় মত প্রকাশ করেছেন অনেকে। পাড়ার আড্ডা বা ব্যক্তিগত আলাপচারিতাতেও অনেকে নিজের নিজের মত জানিয়েছেন। দু’দিন পেরিয়ে গেলেও এই নিয়ে বিতর্ক থামার লক্ষণ নেই বীরভূমে। ‘এনকাউন্টার’ ঠিক কি না সেই প্রশ্নে দু’ভাগে ভাগ জেলার বাসিন্দারা।

Advertisement

এক পক্ষের বক্তব্য, ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধ করেও কখনও বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতা, কখনও ক্ষমতাশালীদের প্রভাবে একজন নির্যাতিতার বিচার পেতে বহুকাল লেগে যায়। কখনও আবার বিচারই পান না তিনি। উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে গণধর্ষণে অভিযুক্তরা জামিনে মুক্ত হওয়ার পরে নির্যাতিতাকে প্রকাশ্য রাস্তায় গায়ে আগুন দিয়ে খুন করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই ঘটনার উদাহরণ টেনেও অনেকে বলছেন এই পরিস্থিতিতে তেলঙ্গানা পুলিশ যা করেছে একেবারে ঠিক।

অন্য পক্ষের দাবি, এক জন অভিযুক্তের যতক্ষণ না দোষ প্রমাণিত হচ্ছে ততক্ষণ তাকে কখনওই অপরাধী বলা চলে না। তাঁদের অভিযোগ, অভিযুক্তদের বিচারের সুযোগ না দিয়ে কার্যত আইন-ই ভেঙেছে পুলিশ। এমন ঘটনা ভয়াবহ ইঙ্গিত বহন করে বলে তাঁদের দাবি। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক সরকারী কর্মী প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘এরপর থেকে সব অভিযুক্তই কি এ ভাবে মরবে? তাহলে সব গণপিটুনিতে খুনকে বৈধ বলতে হয়।’’ এনকাউন্টারের বিরুদ্ধে আরও কড়া প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কেউ লিখেছেন, ‘‘যাদের ধরতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগল তাদের পালাতে গেলে কেন গুলি করে মারতে হবে?’’

Advertisement

হেতমপুর রাজ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সন্ধ্যা দাস রায় বলছেন, ‘‘মহিলা পশু চিকিৎসকের যা ঘটেছে সেটা কিছুতেই মানা যায় না। আমার মেয়ে বড় হয়েছে। একজন মা হিসেবে তেলঙ্গানা পুলিশের এই কাজকে সমর্থন করছি। কারণ অভিযুক্তরা শুনেছি ওদের দোষ স্বীকার করে নিয়েছিল।’’ সন্ধ্যাদেবীর সঙ্গে সহমত বোলপুরের রাখি বন্দ্যোপাধ্যায়। রাখি নিজে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা চালান। তিনি বলছেন, ‘‘তাঁর সঙ্গে ঘৃণ্যতম অপরাধ ঘটে যাওয়ার পর একজন নির্যাতিতার বিচার পেতে বহুকাল গড়িয়ে যায়। তেলঙ্গানা পুলিশ ঠিক কাজ করেছে।’’ সিউড়ির একটি প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা নাজ পারভিনও একই পথে হেঁটেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মত, একজন ধর্ষককে গুলি করে মারাই উচিত। সেদিক থেকে এখানে যা হয়েছে ঠিক হয়েছে। তবে সবার আগে দেখতে হবে দেশ জুড়ে কেন এত ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। কেন একজন মেয়ে নিরাপত্তাহীনতায় বাঁচবে? ফের একটি ধর্ষণের জন্য অপেক্ষা না করে মেয়েরা যাতে অপমানিত লাঞ্ছিত না হয়, সেটাই দেখা উচিত।’’

এই মতের কার্যত বিপক্ষে হেঁটেছেন মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর জেলা সম্পাদক শৈলেন মিশ্র। শৈলেন বলছেন, ‘‘ওই মহিলা পশু চিকিৎসকের সঙ্গে যা ঘটেছে তা একেবারে ঘৃণ্যতম অপরাধ। কিন্তু তার বিরুদ্ধে পুলিশ যা ঘটাল, সেটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ আদালতে অভিযুক্তদের কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়নি। আমার মতে, এটা রাষ্ট্রীয় খুন।’’ বীরভূম জেলার সরকারি কৌঁসুলি মলয় মুখোপাধ্যায়ও পুলিশি এনকাউন্টারে চার অভিযুক্তের মৃত্যুর ঘটনাকে সমর্থন করছেন না। মলয়বাবু বলছেন, ‘‘আইনজীবী হিসেবে সবসময় চাইব, যে যত বড় অপরাধই করে থাকুন, যতক্ষণ না আইনের চোখে তিনি দোষী প্রমাণিত হচ্ছেন, ততক্ষণ তাঁর বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া আইনের পরিপন্থী। তেলঙ্গানায় বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement