খোলা দোকান বন্ধ করছে পুলিশ। বাঁকুড়ার সিনেমারোডে—নিজস্ব চিত্র
রাস্তার পাশের দোকান বাজার বন্ধ হল। তবে ‘লকডাউন’-এ বন্ধ থাকল না পাড়ায়-পাড়ায় জটলা আর আড্ডা। শহরের গলিঘুঁজিতে দোকানও খুলল। টহলে গিয়ে নজরে পড়তেই লাঠি উঁচিয়ে ছুটে গিয়েছিলেন পুলিশকর্মীরা। কিন্তু পুলিশ সরতেই আবার ঝাঁপ খুলল। জমল আড্ডা।
বৃহস্পতিবার ‘লকডাউন’-এ খাস বাঁকুড়া শহরের এই দৃশ্য ভাবাচ্ছে জেলার মানুষজনকে। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়া জেলায় করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা চারশো ছাড়িয়েছে। বাঁকুড়া শহরেও একাধিক জায়গায় করোনা-আক্রান্তের হদিস মিলেছে। তার পরেও যে প্রচুর মানুষের টনক নড়েনি, এ দিনের নানা ঘটনায় তার প্রমাণ মিলেছে বলে মনে করছেন অনেকে। এক জটলায় জনৈক যুবক বললেন, ‘‘আমাদের মধ্যে তো কারও করোনা হয়নি। ভয়ের কিছু নেই।’’
এ দিন বাঁকুড়া শহরের লালবাজার, সিনেমা রোড, রানিগঞ্জমোড়, লোকপুর-সহ বিভিন্ন এলাকায় ‘মাস্ক’ পরে ও ‘মাস্ক’ ছাড়া বেশ কিছু লোকজনকে আড্ডা দিতে দেখা গিয়েছে। কোথাও দু’জন তো কোথাও জনা ছয়েক লোক পাশাপাশি বসে ছিলেন। দুপুরে টহলরত পুলিশ বাঁকুড়া শহরের রাসতলা এলাকায় জটলা দেখে তেড়ে যায়। জনা পনেরো যুবক সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে পাড়ার বিভিন্ন ঘরে ঢুকে পড়েন। এলাকা ফাঁকা করে পুলিশ চলে যায়। ফের আধ ঘণ্টার মধ্যেই শুরু হয় জটলা।
পুলিশের টহলদারি গাড়ি বাঁকুড়া শহরের সিনেমারোড এলাকায় গিয়ে দেখে, একাধিক মুদির দোকান খোলা রয়েছে। অনেকেই কেনাকাটা করছেন। পুলিশ দোকান বন্ধ করায়। স্টেশন মোড় এলাকাতেও অনেকে জটলা করে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পুলিশ তাড়িয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ যেতেই আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে এলাকা।
বিষ্ণুপুর শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়েই পুলিশি পিকেট ছিল। কিন্তু জটলা আটকানো যায়নি। শহরের বোলতলা এলাকায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার পাশে অনেকেই জটলা করে আড্ডা দিচ্ছিলেন। পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে সরিয়ে দেয়। শহরের বাইপাস এলাকা আর ভগৎ সিংহ মোড়েও একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। ঝাপড়মোড়ের একটি ক্যুরিয়র সার্ভিসের অফিস খুলে কয়েকজন কর্মী ‘মাস্ক’ ছাড়াই কাজ করছিলেন। পুলিশের নজরে আসতেই তাঁদের ‘মাস্ক’ পরানো হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিসের দরজা।
এ দিন বাজার বন্ধ থাকায় বিষ্ণুপুর শহরের মাধবগঞ্জ এলাকা ছিল শুনশান। দু’জন সেখানে প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল। বিষয়টি নজরে আসে পুলিশকর্মীদের। দৌড়ে গিয়ে তাঁদের আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ‘লকডাউন’ উপেক্ষা করে শহরের বাহাদুরগঞ্জে একটি চায়ের দোকান খোলা হয়েছিল। পুলিশ গিয়ে বন্ধ করে। পাত্রসায়র ও ইন্দাসের বহু জায়গাতেও আড্ডা চলেছে। খাতড়া শহরে দিনভর পুলিশের টহলদারি গাড়ি ঘুরেছে। সুপুর মোড়ে কিছু লোক জটলা করছিলেন। পুলিশ যেতেই চম্পট দেন। একই দৃশ্য দেখা গিয়েছে খাতড়ার পাম্পমোড়, করালি মোড়েও।
পেশায় চিকিৎসক বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার বলছেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরকার বা প্রশাসনের তৎপরতার অভাব রয়েছে। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাই যে করোনা সংক্রমণ রোখার সবচেয়ে বড় বৈজ্ঞানিক পন্থা, সেটাই মানুষকে বোঝানো হচ্ছে না।” তবে রাজ্যের মন্ত্রী তথা বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের নতুন সভাপতি শ্যামল সাঁতরা বলেন, ‘‘সমস্ত স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য সরকারি ভাবে যা করার, করা হচ্ছে। প্রশাসনও এ ব্যাপারে বিভিন্ন রকমের পদক্ষেপ করে চলেছে।’’ বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও এ দিন বলেন, ‘‘নিয়মমাফিক লকডাউন হয়েছে সব জায়গায়। পুলিশি পিকেট ছাড়াও গাড়িতে টহল চলেছে।’’ তিনি জানান, নিয়ম ভাঙার জন্য জেলা জুড়ে ৩৬ জনকে আটক করা হয়েছে।