অর্পিতা সরকার নিজস্ব চিত্র
মেরে কেটে পাঁচ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের পাটাতনের উপর সপরিবার দুর্গা মূর্তি। কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী। সারা শরীরে অলঙ্কার। হাতে অস্ত্র। সঙ্গে বাহন। স্বস্থানে রয়েছে মহিষাসুর। কিন্তু প্রত্যেকের মুখ গড়া পুরুলিয়ার বিখ্যাত লোকায়ত শিল্প ছৌয়ের মুখোশের আদলে। আড়াই ইঞ্চি উচ্চতার এমন একটি নিখুঁত ছৌ-দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে তাক লাগালেন বাঁকুড়া শহরের ভৈরবপল্লীর অর্পিতা সরকার। ক্ষুদ্র মূর্তি গড়নের শিল্পধারা ও ছৌয়ের মেলবন্ধনে তৈরি ওই দুর্গাপ্রতিমা দেখতে অনেক আসছেন অর্পিতার বাড়ি।
ছোট থেকেই বিভিন্ন জিনিসের ক্ষুদ্র সংস্করণ তৈরি করে আসছেন অর্পিতা। বাড়ি ফেলে দেওয়া সামগ্রী থেকেই ওই সব জিনিস তৈরি করেন তিনি। অর্পিতার কথায়, “ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন ধরনের পুতুল, দেবদেবীর ক্ষুদ্র সংস্করণ গড়ার চেষ্টা করতাম । এই কাজ ধীরে ধীরে নেশার মতো হয়ে যায়। বিয়ের পরও এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। রাঢ় বাংলার ছৌ, ঝুমুর, আদিবাসী নৃত্যকলার প্রতিও আমার টান ছিল। কিন্তু ক্ষুদ্র মূর্তি গড়ার সঙ্গে লোকায়ত শিল্পকে কখনও মেলাতে পারিনি। এ বার পারলাম। আমার এই কাজ যদি মানুষের পছন্দ হয়, তা হলে চালিয়ে যাব।’’
অর্পিতার বানানো দুর্গামূর্তি
অর্পিতার স্বামী মধুসূদন রাজ্য সরকারি কর্মী। তাঁদের দুই সন্তান রয়েছে। দুই ছেলের দেখাশোনা করে সংসারের দায়দায়িত্ব সামলানোর পর অসবর সময়েই এই কাজ করেন অর্পিতা। বাড়ির ফেলে দেওয়া রঙ-বেরঙের টুকরো কাপড়, জরি, দেশলাই কাঠি, ছিঁড়ে যাওয়া মালার পুঁতি ও বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের টুকরো দিয়ে ওই দুর্গা প্রতিমা গড়েছেন তিনি।
শিল্পী অর্পিতা বলছেন, ‘‘ছোট প্রতিমা তৈরির খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরের শিল্পী, শিল্পরসিক ও সাধারণ মানুষেরা অনেকেই বাড়িতে এসে এই প্রতিমা দেখে প্রশংসা করেছেন। এটাই আমার কাছে বড় পাওনা।’’