ফাইল চিত্র।
ঝালদায় কংগ্রেস কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনের ঘটনায় বয়ান বদলের জন্য তাঁর পরিবারের উপর ক্রমাগত চাপ দেওয়া হচ্ছে। শনিবার আরও একটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর পুরুলিয়া জেলা পুলিশের বিরুদ্ধে আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে এমনই মন্তব্য করলেন তপনের ভাইপো মিঠুন কান্দু। পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের গঠন করা বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর নিরপেক্ষ তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। তিনি জানান, সিটের সদস্যরা এখনও তপনের বাড়িতেই আসেননি। পরিবারের সঙ্গে এক বার কথাও বলেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন মিঠুন।
দিন চারেক আগে তিনটি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হওয়ার পর শনিবার আরও একটি ক্লিপ প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তিতে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। সদ্য ভাইরাল হওয়া ক্লিপে তপনের স্ত্রী পূর্ণিমা কান্দুর বয়ান বদলের জন্য ঝালদা থানার আইসি সঞ্জীব ঘোষ চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছে পরিবার। ক্লিপে যে দুই পুরুষ কণ্ঠস্বর শোনা গিয়েছে, তা তাঁর ও সঞ্জীবের মধ্যেও বলেও জানিয়েছেন মিঠুন। যদিও ওই অডিয়ো ক্লিপটির সত্যতা যাচাই করে দেখেনি আনন্দবাজার অনলাইন।
মিঠুনের দাবি অনুযায়ী, আইসি তাঁকে বলেছেন, “আমার কাছে আমার নামে কমপ্লেন দিচ্ছিস। এটা কী হয়? আমার উপর তোর রাগ, অভিমান রয়েছে ঠিক আছে। তুই যদি মনে করিস, আমার চাকরি চলে গেলে, সাসপেন্ড হলে, ছেলে-বউ না খেতে পেলে তোর লাভ হবে, উপকার হবে, তো কর।” উল্টো দিক থেকে মিঠুনকেও বলতে শোনা যায়, “আমি কিছুই করছি না, কাকিমা করছে।”
এর পরেই পূর্ণিমার বয়ান বদলের কথা পাড়তেই শোনা যায় আইসি-র কণ্ঠস্বরে ওই ব্যক্তিকে। মিঠুনের অভিযোগ, সঞ্জীব তাঁকে বলেন, ‘‘তোর কাকিমার সঙ্গে কি কখনও আমার কথা হয়েছে? কী কথা হয়েছে তুই জানিস। আমি যামিনীবাবুকে দিয়ে লিখিয়ে নিচ্ছি। তেমন হলে তুই তোর কাকিমা দিয়ে শুধু টিপ ছাপ দিইয়ে নে। সই করতে অসুবিধা থাকলে। আমি এলটিআর বলে লিখে দেব।” জবাবে মিঠুনকেও বলতে শোনা যায়, “যা হবে, কাল করে দেব সব।’’ ক্লিপে সঞ্জীবের কণ্ঠস্বরে ওই ব্যক্তি এ-ও বলতে শোনা গিয়েছে, “তোর যদি মন চায় আমার কাছে চলে আয়, আমার বন্দুক নিয়ে গুলি করে দে, তোর কাকার খুনের বদলা হয়ে যাবে।”
অডিয়ো ক্লিপটি প্রকাশ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই মিঠুনের সঙ্গে যোগাযোগা করে আনন্দবাজার অনলাইন। তিনি বলেন, ‘‘আইসি তো অন্য নম্বর থেকে ফোন করছে। বয়ান বদলের জন্য চাপ দেওয়া তো হচ্ছেই। কী আর বলি!’’ সিটের তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে মিঠুনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘সিট এখনও পর্যন্ত আমাদের বাড়িতেই আসেনি। আমাদের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলেনি। আইসি-কে না সরালে নিরপেক্ষ তদন্ত কী ভাবে সম্ভব, আমি জানি না।’’
প্রসঙ্গত, তপন হত্যাকাণ্ডে আইসি-র ভূমিকা খতিয়ে দেখতে শনিবার সঞ্জীবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিট। তদন্তের স্বার্থে পূর্ণিমারও গোপন জবানবন্দী আদালতে রেকর্ড করা হয়েছে। ইতিপূর্বে সঞ্জীবের সঙ্গে কথোপকথনের আরও একটি অডিও ভাইরাল হওয়ায় মিঠুনের একটি মোবাইল ফোন, চার্জার এবং দু’টি সিমকার্ড বাজেয়াপ্ত করেছে সিট।
শনিবার ভাইরাল হওয়া অডিয়ো ক্লিপ প্রসঙ্গে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘কোন অডিয়ো? অনেকগুলো অডিয়ো তো ভাইরাল হয়েছে। আমার কাছে কোনও অভিযোগ জমা পড়লে আমি ব্যবস্থা নেব।’’