ধৃত স্ত্রী রীতা আদক। নিজস্ব চিত্র
স্বামী নির্যাতন করছেন। তাই বাড়িতে স্বামীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য থানায় নালিশ জানাতে গিয়েছিলেন স্ত্রী। পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে দেখে, হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বধূর স্বামী। উদ্ধার করে বাঁকুড়া মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শেষে স্বামীকে খুনের অভিযোগে ওই বধূকেই গ্রেফতার করল পুলিশ।
শুক্রবার রাতে বাঁকুড়া সদর থানার শ্যামদাসপুরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত সিন্টু আদক (৫০) শ্যামদাসপুরের বাসিন্দা। নিহতের স্ত্রী রীতা আদককে শনিবার বাঁকুড়া আদালতে পাঠানো হলে তার দু’দিনের পুলিশ হেফাজত হয়।
জেলার এক পুলিশ কর্তা বলেন, “রীতার মেয়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। যে কাঠ দিয়ে রীতা তাঁর স্বামীকে পিটিয়েছিলেন, সেটি উদ্ধার করা হয়েছে। ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
সূত্রের খবর, ২৩ বছর আগে রীতা ও সিন্টুর বিয়ে হয়। তাঁদের তিন মেয়ে রয়েছে। তবে বিয়ের পর থেকেই সিন্টু নেশাগ্রস্ত হয়ে রীতার উপরে নির্যাতন করে আসছেন বলে অভিযোগ। বছর সাতেক আগে রীতা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে তিন মেয়েকে নিয়ে শ্যামদাসপুরেই একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন। বিড়ি বেঁধে, লোকের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে তিন মেয়ের বিয়ে দেন তিনি। কিন্তু অশান্তি পিছু ছাড়েনি রীতার। সিন্টু প্রায়ই রীতাকে মারধর করতেন বলে অভিযোগ। রীতার মা ষষ্ঠী গরাঁইয়ের দাবি, ‘‘শুক্রবার দুপুর থেকেই মদ্যপ অবস্থায় দফায় দফায় আমাদের বাড়িতে এসে ভাঙচুর চালাচ্ছিল সিন্টু। সামাল দিতে রীতাকে ভাড়াবাড়ি থেকে ডেকে পাঠানো হয়। সে এলে তাঁকেও সিন্টু মারধর করে। নিজেকে বাঁচাতে একটি কাঠ দিয়ে রীতা তাঁর স্বামীকে পেটায়। দড়ি দিয়ে স্বামীর হাত-পা বেঁধে ফেলেন।’’
তিনি জানান, রাতে ওই অবস্থায় বাড়িতে স্বামীকে ফেলে রেখে বাঁকুড়া সদর থানায় যান রীতা। সেখানে গিয়ে স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের নালিশ জানিয়ে বাড়িতে পুলিশ ডেকে আনেন। পুলিশ বাড়িতে এসে দেখে সিন্টুর নিথর দেহ পড়ে রয়েছে বাড়ির উঠোনে। খবর পেয়ে তদন্তে সেখানে যান বাঁকুড়া সদর থানার আইসি দেবাশিস পান্ডা। রীতার বয়াননেওয়া হয়।
সংবাদমাধ্যমের কাছে রীতা দাবি করেন, “মদ্যপ স্বামীর প্রতিদিনের অত্যাচার থেকে নিজেকে ও মেয়েদের বাঁচাতে ভাড়াবাড়িতে গিয়ে উঠেছিলাম। লোকের বাড়িতে কাজ করে, বিড়ি বেঁধে তিন মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। তার পরেও ওর অত্যাচার থামেনি। আমার উপর লাগাতার নির্যাতন চালাত, আমার বাপের বাড়িতে হামলা করত। এ বার মাথা ঠিক না রাখতে পেরে পাল্টা মার দিয়েছিলাম।”
সিন্টুর পরিবারের লোকজন ঘটনাটি নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর এক আত্মীয় বলেন, “পুলিশ তদন্ত করছে, আমাদের কিছু বলার নেই।” স্থানীয় সানবাঁধা পঞ্চায়েতের প্রধান পুতুল ভট্টাচার্য বলেন, “এলাকায় এমন একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ায় খারাপ লাগছে।” পুলিশ জানিয়েছে, সিন্টুর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে।