পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
আড়াই বছর ধরে বন্ধ রাখার পরে ফের কলেজ ভোটের ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিল রাজ্য সরকার। এ বার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় রবিবার এক অনুষ্ঠানে কলেজ ভোটের জন্য অধ্যক্ষদের প্রস্তুতি নিতে বলায় ছাত্র সংগঠনগুলির তৎপরতা আরও বেড়ে গিয়েছে।
ছাত্রভোটে রাজ্যের শাসকদলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-কে ঠেকাতে রণকৌশল কী হবে তা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে দিয়েছে আরএসএস প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন এবিভিপি (অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ)। হাল ছাড়তে নারাজ সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআই-ও। তবে এ বারও কলেজগুলি ধরে রাখার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী টিএমসিপি অনেক জায়গাতেই প্রচারে নেমে পড়েছে। কোথাও কোথাও শুরু করেছে দেওয়াল লিখনও।
২০১৭ সালে শেষ কলেজ ভোট হয়েছিল। সে বার প্রায় সব কলেজেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছিল টিএমসিপি। কয়েকটি কলেজে টিএমসিপি-র গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে আসে। এ বার অবশ্য গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও প্রশ্নই নেই বলে দাবি করছেন টিএমসিপির জেলা সভাপতি তীর্থঙ্কর কুণ্ডু। তিনি দাবি করেন, “টিএমসিপি-তে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপারই নেই। সব কলেজে আমরা একজোট হয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত।”
ওই ছাত্র সংগঠন সূত্রে খবর, রাজ্যে পালাবদলের পর থেকে কলেজগুলিতে উন্নয়ন, নতুন নতুন বিষয়ে পঠনপাঠন চালু হওয়া, জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠা ও তার নানা সুবিধাগুলিকেই এ বার কলেজ ভোটের প্রচারে সামনে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় ভাষাকেও গুরুত্ব দিয়ে দেওয়াল লিখনের কথা ভাবা হয়েছে। সদ্য বাঁকুড়া সম্মিলনী কলেজে টিএমসিপির সমর্থনে অলচিকি হরফে দেওয়াল লিখন করা হয়েছে। তীর্থঙ্কর বলেন, “রাজ্য সরকার অলচিকি হরফে পড়াশোনা চালু করে ওই ভাষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আমরাও স্থানীয় ভাষাকে প্রচারে গুরুত্ব দিতে চাইছি।”
কিছু দিন আগেই বাঁকুড়া শহরে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিলে নামতে দেখা যায় টিএমসিপির সদস্যদের। সেই মিছিলে জমায়েত ছিল চোখে পড়ার মত। সংগঠনের অনেকেই আড়ালে জানিয়েছিলেন, ছাত্রভোটের প্রস্তুতির শুরু হয় ওই মিছিল থেকেই। তীর্থঙ্কর বলেন, “আমরা সমস্ত কলেজে আমাদের নতুন করে ইউনিট গড়ার কাজ শুরু করেছি।’’
এ দিকে গত লোকসভা নির্বাচনে বাঁকুড়া জেলার দু’টি কেন্দ্রেই বিপুল ব্যবধানে জয় পায় বিজেপি। তারপর থেকেই জেলার কলেজগুলিতে এবিভিপি-র প্রভাব দেখা গিয়েছে। এবিভিপি-র জেলা সহ-সভাপতি সনুপ পাত্র দাবি করেন,
‘‘জেলার ১৫টি কলেজে আমাদের ইউনিট গড়া হয়ে গিয়েছে। বাকি কলেজগুলিতেও শীঘ্রই ইউনিট গড়ে তোলা হবে।”
এবিভিপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি একটি বৈঠকে বিভিন্ন কলেজের স্থানীয় সমস্যাগুলিকে ছাত্রভোটের প্রচারে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোথাও পরীক্ষার আবেদনপত্র পূরণের ফি বৃদ্ধি, কোথাও আবার কলেজে বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশের প্রতিবাদে সোচ্চার হবেন সংগঠনের সদস্যেরা। পাশাপাশি রাজ্যে বেকারত্ব, সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধের মতো নানা ইস্যুকেও ছাত্রভোটে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই ওই সব বিষয়গুলিকে সামনে রেখে কলেজে কলেজে সভা, মিছিল-সহ বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হবে।
রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে জেলার প্রায় সমস্ত কলেজে টানা ক্ষমতায় ছিল এসএফআই। তবে রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পরেই কলেজগুলিতেও ক্ষমতা হারানো শুরু করে তারা। তবে এ বারের ছাত্রভোটে তারা পূর্ণশক্তি দিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত বলেই দাবি করছেন এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক জয়গোপাল কর। তিনি বলেন, “প্রতিটি কলেজেই আমাদের ইউনিট রয়েছে। তবে টিএমসিপি-র হুমকিতে সদস্যেরা সক্রিয় হতে পারছেন না। তবে এ বার নতুন করে আমরা ফের সব কলেজে কলেজে পূর্ণশক্তিতে লড়াই করতে প্রস্তুত হচ্ছি।”
যদিও টিএমসিপির জেলা সভাপতির দাবি, এক সময়ে ভয় দেখিয়ে বিপক্ষকে দমিয়ে রাখত এসএফআই। তাই ওদের মুখে এই অভিযোগ মানায় না। আর এবিভিপির ভুললে চলবে না, বেকারত্ব, নিয়োগ বন্ধ সারা দেশের সমস্যা। সে জন্য কেন্দ্রের বিজেপির সরকারই দায়ী।
ফের শুরু কলেজ-ভোটের তর্জা।