প্রতীকী ছবি।
কাছেই মা তারার মন্দির। গ্রাম থেকে দু’কিলোমিটারের দূরে তারাপীঠে সারা বছরই ওঁদের হাতের তৈরি মাটির ছাঁচের মা তারার মূর্তি বিক্রি হয়। মূর্তি তৈরি ছাড়া তাঁরা শোলার কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। দুর্গাপুজো যত এগিয়ে আসে সেই ব্যস্ততা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এ বার সেই শিল্পীদের হাতে কাজ নেই। করোনা আবহে অন্য সব কারবারের মতো শোলা শিল্পীরাও কাজ হারিয়েছেন।
রামপুরহাট থানার খরুন গ্রামের রাজচন্দ্রপুর গ্রামে শোলার সাজের কদর বীরভূম তো বটেই মুর্শিদাবাদ জেলাতেও। এ বার করোনা আবহে তারাপীঠ মন্দিরের দর্শনার্থীদের ভিড় তেমন না হওয়ার ফলে মূর্তি বিক্রির বাজারও কমেছে। আশা ছিল, পুজোয় কিছুটা আয় হবে। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। গ্রামের শোলাশিল্পী বুদ্ধদেব মালাকার প্রতি বছর দুর্গাপুজার সময় চার থেকে পাঁচটি দুর্গা প্রতিমার শোলার সাজ তৈরি করেন। এর জন্য কলকাতার বিধাননগর বাজার থেকে শোলার আঁটি কিনে এনে নিজের হাতে শোলার সাজ তৈরী করেন। শোলার সাজ ছাড়াও জরির সাজও করেন বুদ্ধদেববাবু। তিনি জানালেন, ‘‘আমরা কয়েকটি পরিবার এই কাজ এখনও করে আসছি। বাজারে থার্মোকলের কাজের চাপে শোলার সাজ হারিয়ে যাচ্ছে।’’
বুদ্ধদেববাবু জানান, দুর্গাপুজোর কাজের জন্য লকডাউনের আগে কলকাতার বিধাননগর বাজার থেকে ৩০০ টাকা আঁটি দরে অনেক শোলা কিনে নিয়ে এসেছিলেন তাঁরা। কিন্তু লকডাউন শুরু হতেই দুর্গাপুজো ঘিরে দুর্গাপুজো ঘিরে অনিশ্চয়তা শুরু হয়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে আনলক পর্বেও দুর্গাপুজো নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটাতে পারেনি বিভিন্ন দুর্গোৎসব কমিটি। এর ফলে অন্য বার যেমন দুর্গাপুজোর মাস চারেক আগে থেকে কাজের বরাত পেতেন শিল্পীরা, এ বছর দুর্গাপুজোর মাস খানেক আগেও কোনও কাজের বরাত আসেনি। কয়েকটা মাত্র পুজো কমিটি জরির কাজের অর্ডার দিয়েছেন। সেই কাজ পেয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে শিল্পীদের।
বুদ্ধদেব বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের শিল্পী জীবনে এমন দুর্দিন কোনওদিন নেমে আসেনি। এমনিতেই এই কাজের প্রতি ভবিষ্যত প্রজন্মের অনীহা। তারপরে এ বছর কাজের অভাব ভবিষ্যতে কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে আগামী প্রজন্ম।’’]