চা ফেরি করছে এক নাবালক। সিউড়িতে। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়
অতিমারির কাণে দীর্ঘকাল স্কুলের বাইরে শিশুরা। মনোবিদদের মতে, এতে শুধু শিশুদের আচরণগত ও অভ্যাসগত পরিবর্তনই হয়নি, শিশু মনস্তত্ত্বেও দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে। এরই মধ্যে ১৬ নভেম্বর থেকে স্কুল খুলছে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের জন্য। তার আগে জেলার ছোট ছেলেমেয়েদের উপরে অতিমারি কালের মনস্তত্ত্বিক প্রভাব কতখানি, তা যাচাই করতে আজ, শিশুদিবস ঘিরে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানকে হাতিয়ার করেছে বীরভূম জেলা প্রশাসন। শিশুদের অনুভূতি বুঝতে তাদের আঁকা পোস্টার, ছবি ও লেখা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, অনলাইন পোস্টার আঁকা প্রতিযোগিতা হচ্ছে। বয়স ভিত্তিক দু’টি গ্রুপে (৬-১১ ও ১২-১৮ বছর) ভাগ করা হয়েছে। বিষয় হল, পরিবার ও পরিবেশ, বাল্য বিবাহ,। এখানেই শেষ নয়, ১৮ তারিখ জেলা প্রশাসন ভবনে কোভিডকালে ছোটদের অভিজ্ঞতা ছবি ও লেখায় ফুটিয়ে তোলার জন্য আরও একটি পৃথক প্রতিযোগিতা রাখা হয়েছে। সেদিন উপস্থিত থাকার কথা শিশু কমিশনের চেয়ারপার্সনের।
জেলাশাসক বিধান রায় বলছেন, ‘‘এক গত দেড় বছর ধরে শিশুরা ঠিক কী অনুভব করেছে, সেই অনুভূতি ছবি ও লেখার মাধ্যমে ফুটে উঠবে। স্কুল খোলার আগে যা দেখে নেওয়া জরুরি। সেগুলি পর্যালোচনা করে সম্মিলিত পদক্ষেপ করা যাবে।’’ জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক নিরুপম সিংহ জানান, ১৬ তারিখের মধ্যে জেলার প্রতিটি কোণ থেকে যাতে বেশি সংখ্যক শিশু অংশ নেয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। প্রচারে যুক্ত করা হয়েছে ব্লক, গ্রাম পঞ্চায়েত ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে (যারা শিশু নিয়ে কাজ করে)।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, কোভিড কালে শুধু মানসিক বিকাশই নয়, লঙ্ঘিত হয়েছে শিশু অধিকারও। স্কুলছুটের সঙ্গে সঙ্গে শিশু শ্রমিক বেড়েছে। বেড়েছে বাল্য বিবাহও। পোস্টার আঁকা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় বিষয় সেটা নিয়েই। জানা গিয়েছে, ২০২০-’২১ অর্থ বর্ষে ২৪২টি বাল্যবিবাহের খবর পেয়েছিল জেলা প্রশাসন। আটকানো গিয়েছে ২২০টি। চলতি অর্থবর্ষে এ পর্যন্ত বাল্য বিবাহের খবর এসেছে ১১৫টি। প্রশাসন তার মধ্যে ১০৪টি বিয়ে আটকেছে। উদ্বেগ, আরও কত বাল্য বিবাহ নজরদারির আড়ালে হয়ে গেল, তা নিয়েই।
শিশু অধিকার লঙ্ঘনের প্রতিটি ঘটনার তথ্য পেতে প্রত্যন্ত এলাকায় শিশুকল্যাণের উপরে নজরদারি চালাতে জেলা ও ব্লক স্তরে কমিটি তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি সংসদে এবং পুর-এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে শিশু সুরক্ষা সমিতি তৈরি হয়েছে। কিন্তু, প্রশিক্ষণের অভাবে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের ছবি সে ভাবে উঠে আসে না বলে প্রশাসন সূত্রেই জানা যাচ্ছে। জেলাশাসকের কথায়, ‘‘শিশু দিবসের প্রাক্কালে সেই কমিটিগুলিকে কী ভাবে আরও শক্তিশালী কার্যকর করা যায়, কন্যাশ্রী ক্লাব গুলিকে আরও সজাগ করা যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”